ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বৃষ্টি, উপকূলজুড়ে আতঙ্ক
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাগেরহাট জেলাজুড়ে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। দুপুরেও সূর্যের দেখা নেই উপকূলীয় এই জেলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। বসত বাড়ি, গবাদি পশু ও মৎস্য ঘের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় দানা আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। সকল সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঝড়টি এই মুহূর্তে মোংলা বন্দর থেকে ৪৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল সকাল ৬টার মধ্যে যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে দানা।
রাতে আঘাত হানার খবরে উপকূলবাসীর কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। জানমাল হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন নাজুক বেরিবাঁধ ও বেরিবাঁধ না থাকা এলাকার মানুষ। জলচ্ছাস হলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনেরও ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
রামপাল উপজেলার রোমজাইপুর গ্রামের মো. তুহিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোনো বেরিবাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে। ঝড়ে কি হবে জানি না, আশ্রয়কেন্দ্র অনেক দূরে।
পেরিখালী ইউনিয়নের নারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হেনা বেগম বলেন, ‘রামপালে ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ অংশ বেরিবাঁধের বাইরে। যেকোনো ঝড়-জলচ্ছাসে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দানার খবরে সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরাও মানুষকে সচেতন করছি। যাতে মানুষের জান মালের ক্ষতি কম হয়।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও ব্লক প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী অংশে ৫০০ মিটারের মতো ঝূকিপূর্ণ রয়েছে। প্রয়োজনে জরুরি মেরামত করা হবে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের বেশকিছু এলাকায় বেরিবাঁধ নেই। তাদেরও সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। উপকূলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্য জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। আপদকালীন মানুষদের সহযোগিতার জন্য ৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে। ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান।