স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মুখোমুখি ড্যাব-এনডিএফ, হামলায় ৩ চিকিৎসক আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:০৩
শেয়ার :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মুখোমুখি ড্যাব-এনডিএফ, হামলায় ৩ চিকিৎসক আহত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে স্বাস্থ্য প্রশাসকদের নিয়োগকে কেন্দ্র করে ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ও ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন চিকিৎসক আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী টিবি গেটস্থ স্বাস্থ্য ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

পরে হামলার বিচার চেয়ে অধিদপ্তরে মিছিল ও সমাবেশ করেন এনডিএফ ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকেরা। এ সময় তারা বলেন, আজকের মধ্যে হামলার বিচার ও চলমান সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অধিদপ্তরে ছেড়ে যাবেন না।

প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অধিদপ্তরের সামনের সিঁড়িতে অবস্থান নেন এনডিএফপন্থী ও বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকরা। সকাল ১০টার দিকে অধিদপ্তরে আসেন ড্যাবপন্থী চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও টেকনোলজিস্টরা। তাদের পেছনেই রড, লাঠিসোঠা নিয়ে কয়েকজন বহিরাগত ছিলেন। ড্যাবের চিকিৎসকেরা এনডিএফের চিকিৎসকদের জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর মধ্যেই বহিরাগতরা ৬ থেকে ৭ জন এনডিএফের কয়েকজন চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেন।

এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইমরানসহ অন্তত তিনজন আহত হোন। এর মধ্যে ডা. ইমরানের বুকের একটি হাড় ভেঙে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তার মাথা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আহত অন্য দুই চিকিৎসক হলেন, বিএসএমএমইউয়ের হেপাটোলজি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাহমুদ। তবে আরেক আহত ডা. আরিফের বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

হামলার প্রতিবাদে পরে অধিদপ্তরের বিভিন্ন ফ্লোরে বিক্ষোভ মিছিল করেন এনডিএফ ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকেরা। এ সময় ‘বহিরাগত দিয়ে চিকিৎসকের ওপর হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।

চিকিৎসকেরা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ড্যাবের একটি অংশ বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালায়। তাও আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো জায়গায়। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এনডিএফের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার ফোকাল পারসন ডা. আব্দুল কাদির নোমান বলেন, ‘দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য দূর করতে যে আন্দোলন করেছেন, স্বৈরাচার দূর করেছেন, সেটি আজ নিজেদের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়াচ্ছি, স্বৈরাচারের দোসররা হাসছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তারা কখনোই কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। সরকারি চাকরি করলে অনেক সময় বাধ্য হয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর কেন হামলা হলো? আমরা বিশ্বাস করি হামলাকারীরা কোনো চিকিৎসক নন। ড্যাবের একটা অংশ বহিরাগতদের ভাড়া করে এনে হামলা করেছেন। হামলার ভিডিও ফুটেজ আছে, অধিদপ্তরের সিসি টিভি ফুটেজ আছে। অধিদপ্তরের প্রশাসকদের হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’

তবে এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ড্যাবের নেতারা। তারা বলেন, ‘এনডিএফের কয়েকজন শুরুতে আমাদের লোকদের গায়ে হাত উঠায়। এরপরই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কেউ সামান্য আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। কাউকে মারধর করা হয়নি।’

ড্যাবের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার সভাপতি ডা. ফারুক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বহিরাগতদের আনা তো দূরের কথা, উল্টো আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির জায়গা ওনারা দখল করেন। এমনকি আমাদের টাঙানো ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। তারপরও আমরা কিছু বলিনি। বরং মহাপরিচালক আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করার কথা বলেছেন, আমরা করেছি। কিন্তু তারা (এনডিএফ) এখনো অধিদপ্তরে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই স্বচ্ছ ব্যক্তিদের অধিদপ্তরে প্রশাসনে বসানো হোক। অতীতে স্বৈরাচার সরকারের তোষামোদি করেছে, নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে এমন ব্যক্তিকে বসতে দেওয়া হবে না। সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে বলে আমরা আশা রাখছি।’

এ প্রতিবেদন লোখা পর্যন্ত অধিদপ্তরের দুটি সভাকক্ষে ড্যাব ও এনডিএফ নেতাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। স্থবির রয়েছে অধিদপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম।