ওপারের বিস্ফোরণে ফাটছে এপাশের ঘরবাড়ি

টেকনাফ প্রতিনিধি
২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৩৩
শেয়ার :
ওপারের বিস্ফোরণে ফাটছে এপাশের ঘরবাড়ি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র লড়াইয়ের তীব্রতায় এতদিন কেবল কাঁপছিল টেকনাফ। এবার ঘরবাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। সাবরাং ইউনিয়নের আছারবুনিয়া গ্রামের অন্তত ২০-২৫টি বাড়িতে ফাটলের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

গত কয়েকদিন ধরে মংডুতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে এপারে। মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধ বিমান চক্কর বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে বোমা বর্ষণের আওয়াজ।

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল রবিবার মধ্যরাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত টানা মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে টেকনাফ সীমান্তবর্তী বাড়ি-ঘর। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পরে টেকনাফের পৌরসভা, সদর, শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, সেন্টমার্টিন, ও হ্নীলা এলাকায় ওই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে।

শাহপরীর দ্বীপ রহমত উল্লাহ জানান, ‘রাতে মিয়ানমারের মগনি পাড়া, ফরি পাড়াসহ অনেক স্থানে গোলাগুলি হয়েছে, যার শব্দ আমরা শুনেছি। মধ্যরাতে হঠাৎ বিস্ফোরণে আমার বাড়ির সকলে ভয় পেয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। আমাদের বাড়ি-ঘর পর্যন্ত কেঁপেছে। আমার মনে হচ্ছে এটি বিশাল বোমা হতে পারে। ’

সাবরাং ইউপি সদস্য মো. শরীফ বলেন, ‘কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল দেখতে পান বাসিন্দারা। গত কয়েক দিনে অন্তত ২৫টি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। গতরাতে যে বিস্ফোরণ মংডুতে হয়েছে, তার বিকট শব্দ ও ধাক্কায় বেশকিছু বাড়ির দেওয়াল ফেটে গেছে। এ এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফাটল ধরা ঘরগুলোয় বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, ‘আমার কয়েকটি গ্রাম থেকে মংডুর দূরত্ব চার কিলোমিটার। বিস্ফোরণে কারণে ২০-২৫টি বাড়ির মাটির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এই গ্রামের মানুষের রাত কাটছে নির্ঘুম। মর্টার শেলের বিকট আওয়াজে ঘুমানোও যায় না। রাত হলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দ্বিগুণ হয়। ’ 

২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, এ রকম ফায়ারিং এর শব্দতো প্রতিদিন হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিজিবি সব সময় সর্তকতা অবস্থায় আছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফনদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক আছে। এছাড়া গ্রামবাসীর বসতবাড়িতে ফাটল ধরার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।