কালিয়াকৈরে সাইজুদ্দিন আতঙ্ক /

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দোকান-মার্কেট দখল

গাজীপুর প্রতিনিধি
২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০৪
শেয়ার :
বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দোকান-মার্কেট দখল

বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। এর পরদিন থেকেই বিএনপি নেতা মো. সাইজুদ্দিন হয়ে উঠেন বেপরোয়া। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দোকান-মার্কেট দখল, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন দলটির এই নেতা।

মো. সাইজুদ্দিন আহমেদ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় পূর্বচান্দরা এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। 

জানা গেছে, বিএনপির এই নেতা নিজের পালিত বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছেন। শুধু তাই নয়, গত দুই মাসে অন্তত ২০ বিঘা বন বিভাগের জমিও দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি।  

যদিও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লিয়াজোঁ করে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর এখন অনেকটাই বেপরোয়া তিনি। সাইজুদ্দিন ও তার লোকজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৩ মার্চ গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান স্বপন বকশীকে প্রকাশ্যে হত্যা করে আলোচনায় আসেন সাইজুদ্দিন আহমেদ। 

ওই হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সক্ষতা গড়ে তুলেন তিনি। ২০২২ সালে বাগিয়ে নেন কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ।

একদিকে বিএনপির পদ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে গোপন সক্ষতা করে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য, টোকাই দিয়ে তৈরি করেন ক্যাডার বাহিনী। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসন ও নির্যাতনে বিএনপি নেতারা যখন ঘরবাড়ি ছাড়া, তখন সাইজুদ্দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য করে চালাতে থাকেন ঝুট ব্যবসা ও গুদাম দখলসহ নানা অপকর্ম।

এলাকাবাসীরা জানায়, ৬ আগস্ট চান্দরা সাহেবপাড়া এলাকার জহিরুল হক জনির বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করে ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন জনি। সেই থেকে দুই মাসের বেশি সময় বাড়িছাড়া জনি ও তার বৃদ্ধ মা। প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কালিয়াকৈর থানা এবং গাজীপুর সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

এ বিষয়ে জনির মা কান্নাজড়িত বলেন, ‘বাড়ি ও জায়গা আমাগো। সাইজুদ্দিন জোর করে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ভাঙচুর করে টাকা-পয়সা সব নিয়ে গেছে। আমরা পরিবার নিয়ে ঘরছাড়া। এখন আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।’

উপজেলার সফিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের। প্রায় ৪০ বছর ধরে সফিপুর বাজারে সরকারি দোকান ইজারা নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। ৫ আগস্টের পর তার দীর্ঘদিনের সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দখল করে নেন সাইজুদ্দিন। 

এ ছাড়া এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে একই বাজারের আরও চার ব্যবসায়ীর দোকান দখল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অনুসারী, কর্মীরা পূর্ব চান্দরা, বোর্ডমিল ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় বনের জমি দখল করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকার বাজারগুলো থেকে তারা চাঁদা তোলারও অভিযোগ আছে। 

এ বাহিনী পূর্ব চান্দরার বোর্ডমিল এলাকায় শান্তি নগর যুব সংঘের নামে ক্লাব নির্মাণ করে যতো অশান্তির কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। এখানেই থেমে থাকেননি সাইজুদ্দিন। আনসার একাডেমির ৩ নম্বর গেটের বিপরীতে ৩২ শতাংশ জমিতে থাকা খালেক সুপার মার্কেট দখল করে দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখানে নিজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন সাইজুদ্দিন। যার বাজারমূল্য ৪ কোটি টাকা। 

গত দেড় মাসে সাইজুদ্দিনের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানা, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে বেশ কয়েকটি। 

এ বিষয়ে সাইজুদ্দিনের ভাগিনা তরিকুল ইসলাম বলেন, অনেকেই শতবিঘা বনের জমি দখল করেছেন, মামা তো সামান্যই করেছেন।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপির পদে থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন সাইজুদ্দিন। তিনি ও তার অনুসারীদের কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে জনপ্রিয় দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, দলের পদে থেকে অপকর্ম করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তারেক রহমানের পরিষ্কার বার্তা—কেউ অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আযাদ বলেন, ‘সাইজুদ্দিনের বিষয়টি আমার কানে এসেছে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাইজুদ্দিন আহাম্মেদের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ফোন করা হলে তিনি বলেন, জমিজমার বিষয়টি আদালতের। আপনারা সেখানে যান।