কে ধরবেন হামাসের হাল?
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যার দুই মাস পেরোনোর আগেই নতুন কাণ্ডারী ইয়াহিয়া সিনওয়ারকেও হত্যা করেছে ইসরায়েল। গত সেপ্টেম্বরে ইরানের রাজধানী তেহরানে হানিয়াকে হত্যার পর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ইয়াহিয়া।
পরপর দুইজন শীর্ষ নেতাকে হারানোর পর সিনওয়ারের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, কে ধরতে যাচ্ছেন হামাসের হাল- এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, গ্রুপের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের উত্তরসূরি বেছে নিতে অচিরেই আলোচনা শুরু হবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, সিনওয়ারের ডেপুটি খলিল আল-হায়া এবং গাজার বাইরে গ্রুপের একজন সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন। এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে খালেদ মেশালের নাম শোনা গিয়েছিল। তবে হামাসের পক্ষ থেকে তার নাম নিশ্চিত করা হয়নি।
বর্তমানে কাতারে অবস্থানরত আল-হায়া ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাস প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তাকে গাজা পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, সংযোগ ও বোঝাপড়ার অধিকারী বলে মনে করা হয়। খলিল আল-হায়া গত আগস্ট থেকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি মরহুম সালেহ আল-আরৌরির উত্তরসূরি।
তেহরানে সাবেক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ হত্যার মাত্র দুই মাস পর হামাস নেতারা গত বুধবার নিহত ইসরাইলের মোস্ট ওয়ান্টেড সিনওয়ারের উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য আবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবরের হামলার মূল নায়ক হিসেবে বর্ণনা করে জোর দিয়ে বলেছেন যে তার নিয়োগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি সাহসী বার্তা ছিল।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
এদিকে জুলাই থেকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে সিনওয়ারের নেতৃত্ব যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা ছিল।
হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, সিনওয়ারকে হত্যা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির শর্ত বদলায়নি।
হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, শত্রুতার অবসান, মানবিক সাহায্য হস্তান্তর এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলের পুনর্গঠনের দাবি অব্যাহত রেখেছে। তবে ইসরায়েল এসব শর্ত স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে হামাসকে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জোর দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
হামাসকে অস্ত্র ও আত্মসমর্পণের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিায়ামিন নেতানিয়াহুর আহ্বান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে হামাস কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন: 'আমাদের পক্ষে আত্মসমর্পণ করা অসম্ভব।' তারা বলেন, 'আমরা আমাদের জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। আমরা আত্মসমর্পণ মেনে নেব না। আমরা শেষ বুলেট ও শেষ সৈনিক পর্যন্ত লড়াই করব, ঠিক সিনওয়ার যেমনটি করেছেন।'
হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ইয়াসিনসহ বেশিরভাগ নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তবে প্রতিবারিই যোগ্য নেতা খুঁজে বের করেছে হামাস।
এই সংকটের মধ্যে গাজায় বন্দী ইসরাইলি জিম্মিদের ভাগ্য এবং তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায় কার ওপর বর্তাবে হবে সে সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি হামাসের অবশিষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন এবং গাজার হামাসের ভবিষ্যৎ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ফক্স নিউজ একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে বুধবার নিহত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার হামাসের পরবর্তী প্রধান হতে পারেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ার তার ভাই ইয়াহিয়া সিনওয়ারের চেয়ে ১৩ বছরের ছোট। তিনি ১৯৭৫ সালে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরে বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল।