মতিয়া চৌধুরীকে ঘিরে প্রচারিত সংবাদ নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
মতিয়া চৌধুরীকে ঘিরে প্রচারিত সংবাদের সমালোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ সমালোচনা করেন।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলো মতিয়া চৌধুরীর দীর্ঘ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে সামনে এনে তাকে সম্মান জানিয়েছে। কিন্তু নির্মোহ শোক সংবাদের পরিবর্তে সেগুলোতে মূলত ছিল সাধারণ প্রশংসা, যেন একজন মুরিদ তার পির সম্বন্ধে লিখছেন।’
তিনি লিখেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে আমরা ছোট থেকে অনেক সুফি তাজকিরা বিশেষ করে তাজকিরাতুল আউলিয়া এবং তাজকিরাতুল আম্বিয়া পড়ে বড় হয়েছি।’
প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘১৯৬০ সালে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেব তার ভূমিকা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের ইতিহাসের কিছু গৌরবান্বিত অধ্যায়েও তার ভূমিকা রয়েছে। যেমন আইয়ূব খানের আমলে ছাত্র আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে আশির দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। একজন শোকগাঁথা লেখককে অবশ্যই এই ঘটনাগুলো স্পর্শ করতে হবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু আপনারা (সংবাদ মাধ্যম) শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে তার ভূমিকাকে, তিনি কীভাবে ছাত্র আন্দোলনকে দানব আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি কীভাবে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ হয়েছেন, তা অবজ্ঞা করেছেন। তিনি যেভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসকের বন্দনা করেছেন, প্রকৃতপক্ষে আপনারা সেটিকেই বৈধতা দিচ্ছেন।’
প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে যুগ যুগ পরেও আমাদের সংবাদপত্রগুলো শোক সংবাদ লেখার শিল্প ধরতে ব্যর্থ। অথবা তারা মৃত ব্যক্তির সমালোচনা না করার ইসলামিক রীতির সমর্থক।’
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।
১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন।
১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
পরে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে পুনরায় তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?