যাচ্ছেতাইভাবে গড়ে উঠছে আবাসিক এলাকা

শাহজাহান মোল্লা
১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
যাচ্ছেতাইভাবে গড়ে উঠছে আবাসিক এলাকা

রাজউকের আওতাধীন এলাকায় যাচ্ছেতাইভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক আবাসিক এলাকা; নির্মিত হচ্ছে অপরিকল্পিত বহুতল ভবন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জলাধার, মাঠ, পার্ক, কৃষিভূমি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে এসব আবাসিক এলাকা। এতে উপেক্ষিত থাকছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা- ড্যাপ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঝিমিয়ে পড়ে রাজউকের কার্যক্রম। অন্যদিকে রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ড্যাপ বাতিল চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজউক ড্যাপ বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে। ফলে আবাসন ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশিমতো বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।

যেসব এলাকায় এসব হাউজিং গড়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম বসুন্ধরা রিভার ভিউ প্রকল্প, সাউথ সিটি, মধুসিটি, নবীনগর হাউজিং, ধানমন্ডি রিভার ভিউ, সিলিকন হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং, চাঁদ উদ্যান হাউজিং,

একতা হাউজিংসহ একাধিক আবাসন প্রকল্প রয়েছে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে বছিলা, কেরানীগঞ্জ, আঁটিবাজার, কলাতলীসহ পুরো কেরানীগঞ্জ এলাকায় তাদের থাবা পড়েছে। এর মধ্যে প্লটভিত্তিক উন্নয়ন করে বহুতল ভবন তোলা হয়েছে। এসব ভবনের ফ্ল্যাটও বিক্রি হচ্ছে, যার কোনোটিরই রাজউকের অনুমোদন নেই। এভাবে অননুমোদিত হাজার হাজার ভবন কীভাবে পরিকল্পনার আওতায় ফেরাবে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রাজউক।

রাজউকের আওতাধীন এলাকায় আবাসন প্লট প্রস্তুত করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুসারে ও টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট অনুসারে সংস্থাটির অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই বিধিমালা অনুসারে সিটি করপোরেশন এলাকায় পাঁচ একরের বেশি এবং সিটি করপোরেশনের বাইরের ক্ষেত্রে ১০ একরের বেশি জমির প্রয়োজন। প্রকল্প এলাকায় রাখতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ খেলার মাঠ, পার্ক, রাস্তা ও স্কুলের জায়গা এবং মোট জমির শতকরা ৭৫ ভাগের নিজস্ব মালিকানা। কিন্তু বাস্তবে এই বিধিমালার কঠিন শর্তসমূহ পাশ কাটিয়ে রাজউক আওতাধীন এলাকায় গড়ে উঠছে নামে-বেনামে অর্ধশতাধিক হাউজিং কোম্পানি।

জানা যায়, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুসারে অনুমোদিত না হওয়ায় এসব এলাকায় রাজউক কোনো ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদন করে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক বা একাধিক মামলা ঠুকে দিয়ে দেদার চলছে অবৈধ ভবন নির্মাণ ও প্লট বেচাকেনা। কোনো জমিতে একবার বালুভরাট হয়ে গেলে, সেটি উচ্ছেদ করা একটি দুরূহ কাজ। আবার এই অপরাধের জন্য নেই কোনো কঠোর আইন। ফলে এসব সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা বারবার নদী, খাল, নিম্নাঞ্চল, সরকারি খাসজমি ও কৃষিজমি ভরাট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নীতিমালা না থাকায় রাজউকও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না তাদের বিরুদ্ধে।

তা ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ না পাওয়ায় বিধিবহির্ভূত নির্মাণাধীন ও নির্মাণ হয়ে যাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারছে না রাজউক। আগে উচ্ছেদ অভিযান ও নোটিশ জারি করে নকশাবহির্ভূত ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত রাজউক। বর্তমানে সেই কাজটিও প্রায় বন্ধ রয়েছে। বিগত সরকার এসব এলাকার অননুমোদিত ভবন শর্তসাপেক্ষে জরিমানা দিয়ে অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আনার জন্য রাজউককে একটি নীতিমালা করার নির্দেশনা দেয়। ৫ আগস্টের পর এই নীতিমালা প্রণয়নের কাজও স্থগিত আছে।

রাজধানীর কেরানীগঞ্জসহ অপরিকল্পিতভাবে শহরে যেসব ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলোর কোনোটিরই রাজউকের নকশা নেই। তাই ভবন নির্মাণের যেসব শর্ত থাকে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই শহর বিষফোঁড়ায় পরিণত হবে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের মতে, শুরুতে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরে ভাঙা দুষ্কর। যখন একটি ভবনে মানুষ বসবাস শুরু করে তখন, সেটি ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা খুব কঠিন কাজ। তাই নীতিমালার আওতায় নিয়ে কাজের অনুমতি দিলে একটি পরিকল্পিত বাসযোগ্য উপশহর হতে পারত বলেও মনে করেন তারা।

বিধিমালা না থাকায় কোনো কাজ করতে পারছে না আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে মধুসিটির মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক মো. সাঈদ উদ্দীন আমাদের সময়কে বলেন, কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় রাজউকের কোনো বিধিমালা না থাকায় আমরা কোনো কাজ করতে পারছি না। বিধিমালা হলে সে অনুযায়ী কাজ করব।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে রাজউক কীভাবে ভাবছে জানতে চাইলে সংস্থাটির সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) (যুগ্ম সচিব) মোহা. হারুন-অর-রশীদ আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টা নিয়ে আমরাও চিন্তিত। নীতিমালা প্রণয়নে একটা সভা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, দ্রুতই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব। যেগুলো নির্মাণ হচ্ছে, আর যেগুলো হয়ে গেছে সেগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে সবই নীতিমালায় থাকবে।