এক নজরে মতিয়া চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক
১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৪৮
শেয়ার :
এক নজরে মতিয়া চৌধুরী

বেগম মতিয়া চৌধুরী বয়স তখনো ষোলো হয়নি, সবেমাত্র কলেজে পা পড়েছে। স্বৈরশাসক আইয়ুববিরোধী আন্দোলন তখন দানা বাঁধছে। মিছিল-স্লোগান আর একের পর এক কর্মসূচিতে ঢাকার বাতাস উষ্ণ হয়ে উঠেছে। একজন সচেতন ছাত্রী হিসেবে মতিয়া চৌধুরীও নিজেকে ক্লাসরুমে আবদ্ধ রাখতে পারেননি। মনের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন ওই আন্দোলনে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত কর্মসূচি সফল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একজন তরুণ সংগঠকের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে ঝাঁপ দেন। দিনে দিনে এভাবেই পুরোপুরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন মতিয়া চৌধুরী।

মতিয়া চৌধুরীকে বলা হয় অগ্নিকন্যা। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে তার যে উদ্দীপ্ত ভাষণ, সেই উদ্দীপ্ত ভাষণ তাকে অগ্নিকন্যার রূপ দিয়েছে। ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজনীতিতে সততা এবং আদর্শবাদের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। ছাত্র ইউনিয়ন শেষ করে তিনি ন্যাপ-এ যোগদান করেছিলেন এবং এক সংকটকালীন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন।

নিজের সদাসতর্ক অবস্থান তাকে দিয়েছে রাজনীতির পরিচ্ছন্ন নেত্রীর খ্যাতি। রাজপথের অগ্নিঝরা আন্দোলন-সংগ্রাম আর জেল-জুলুম-নির্যাতনও কম সহ্য করেননি। এর বদৌলতে দেশ-বিদেশে ‘অগ্নিকন্যা’খ্যাতিও পেয়েছেন। ক্ষমতাধর হলেও থেকেছেন একেবারেই নির্লোভ-নির্মোহ।

১৯৬৩-৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে রোকেয়া হলের ভিপি এবং ১৯৬৪ সালে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্র ইউনিয়নে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নামেই ছাত্র ইউনিয়নে একটি গ্রুপের নাম হয়েছিল ‘মতিয়া গ্রুপ’।

মতিয়া চৌধুরী ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন তার। দীর্ঘ রাজনৈতিক এই জীবনে নানা দুর্বিষহ স্মৃতিও রয়েছে। দু-একবার নয়, জেলে গেছেন ১৫ বার। বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে জেলে। কিন্তু মাথা নত করেননি। প্রাণনাশের হুমকি এসেছে বহুবার, তবু নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯- টানা দুই বছর জেল খাটেন এবং সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন সময় তিনি কারাবরণ করেন। রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বক্তা হিসেবে খুবই খ্যাতি অর্জন করেন। 

১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও মরহুম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন।

১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া যোগ দেন দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিজের রাজনৈতিক দক্ষতা-যোগ্যতায় তিন দফায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে তিনি কৃষি, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এ নিয়ে আরও দুই দফায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে শেরপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি দুইবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

১৯৪২ সালের ৩০ জুন মতিয়া পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।