দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে কী করতে হবে, জানালেন জামায়াত আমির

অনলাইন ডেস্ক
১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:১২
শেয়ার :
দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে কী করতে হবে, জানালেন জামায়াত আমির

দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হলে সিন্ডিকেট ভেঙে চুরমার করে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। আজ মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ছিল মজলুম এবং রাস্তায় যে ভাইটি ভিক্ষা করতেন তিনিও মজলুম। কারণ ওই সব ভিক্ষুককে চাঁদা দিতে হতো গুণ্ডাদের কাছে। চাঁদা না দিলে তারা ভিক্ষা করতে পারতেন না। সারাদিন ভিক্ষা করে যা থাকত তা দিয়ে আবার সংসার চলত না। কারণ ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৩০০ টাকায় কিনতে হতো। ৫ আগস্ট আমাদের ছেলেরা নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এখনো সে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হলে সিন্ডিকেট ভেঙে চুরমার করে দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছর একটি দলের ওপর যে রকম জুলুম করা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্য কোনো দলের ওপর সে জুলুম করা হয়নি। সে দলটার নাম হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, আমরা কারো ওপর প্রতিশোধ নেব না। আমরা কেউ আইন হাতে তুলে নেব না। অর্থাৎ আমরা সামগ্রিকভাবে ক্ষমা করে দিতে চাই কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যে অপরাধ করেছেন ইনসাফের দাবি হচ্ছে তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ জন্য আমরা ৪১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এর মধ্যে ১০ দফা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। আমরা একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশে নারী, পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোনো মানুষ তার ন্যায্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যে সমাজে একজন বিচার প্রার্থীকে আদালত প্রাঙ্গনে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হবে না। কোনো বিচারক তার আসনে বসে আল্লাহকে ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্র শক্তিকে পরোয়া করবে না। রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করবে। আমরা এমন একটি বিচার ব্যবস্থা চাই, যে বিচার ব্যবস্থায় উচু-নিচু কাউকে মাপা হবে না। বিচার প্রার্থীকে বিচার প্রার্থী হিসেবে দেখবে। কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আদালতে হাজির হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্যও তাকে দণ্ড দিতে হবে। আবার যদি সঠিক অভিযোগ নিয়ে কেউ হাজির হয়, তাহলে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে তাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি চাই, যে জাতিতে পাঁচ তলা আর দশ তলার ব্যবধান থাকবে না। কারও দশ তলা থাকুক এতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো মানুষ অর্থাভাব ও দারিদ্র্যতার কারণে ফুটপাতে থাকবে তা বরদাস্ত করা হবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে প্রত্যেকটি বঞ্চিত ও দরিদ্র পরিবারের জন্য আশ্রয়ানের নিশ্চয়তা প্রদান করা। আমাদের দেশে কিছুদিন আগে সরকারি উদ্যোগে আশ্রায়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কোনো এক জায়গায় তৈরি করার আগেই ঘর ভেঙে পড়েছিল। জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা নেওয়ার জন্যই তা করা হয়েছিল।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮ জন, ২০২১ সালে ১৮ জন ও ২০২৪ সালের শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম বলেন, ‘স্বৈরাচারি হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে বৃহত্তর কারাগার বানিয়ে মানুষের সব অধিকার হরণ করে নিয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি। ইসলাম হচ্ছে আমাদের জীবনের একমাত্র আদর্শ। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ জীবনের অংশেই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো আদর্শ মানা যাবে না। আর পূর্নাঙ্গ ইসলাম মানার একমাত্র ক্ষেত্রে হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সেকুলার বা অন্য কোনো মানব রচিত আদর্শে গড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থায় থেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মানা সম্ভব হবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতের আমির গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মুহা. মোবারক হোসাইন আকন্দের পরিচালনায়

অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ও অধ্যক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির সৈয়দ গোলাম সারওয়ার, জেলা নায়েবে আমির কাজী ইয়াকুব আলী, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, এডভোকেট আব্দুল বাতেন, সাবেক ছাত্রনেতা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ নাঈম, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম ভূইয়াসহ আরও অনেকে। 

উল্লেখ্য, কর্মী সম্মেলন শেষে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতী মোবারক উল্লাহসহ উলামা-ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দুপুরে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে যোগদান শেষে সন্ধ্যায় জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলুম জাদুঘর মাদ্রাসায় পরিদর্শন করেন এবং আলেম-উলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।