বাংলাদেশের জেলেদের সঙ্গে কী ঘটেছিল বঙ্গোপসাগরে
কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ৫৭ জেলেকে নির্যাতনের পর ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। তাদের উদ্ধার করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে আনা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ইউএনও বলেন, ‘মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে একজন জেলে নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। নিহত, গুলিবিদ্ধসহ ১১ জনকে সকালে ফেরত আনা হয়েছে। বিকেলে মিয়ানমার নৌবাহিনীর থেকে আরও ৪৭ জেলেকে নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘটে পৌঁছেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা।’
এর আগে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে পাঠায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা। নিহত জেলের নাম মো. ওসমান গণি। তিনি শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাঁচা মিয়ার ছেলে। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন শাহপরীরদ্বীপ বাজার পাড়ার বাসিন্দা রাজু ও মাঝের পাড়া মো. রফিক।
ট্রলারের মালিক মো. কায়সার বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি মাছ শিকারের সময় নাইক্ষ্যংদিয়া সংলগ্ন অংশে মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ আমার ট্রলারে অতিক্রম করে। তারা সংকেত দিয়েছিল, জেলেরা ভয়ে যায়নি তাদের কাছে। এ জন্য সে নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে হঠাৎ আমার ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে আমাদের এক জেলে মারা গেছে, আরও দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হয়। আমরা নাফ নদের বাংলাদেশের জলসীমায় ছিলাম এবং হাত উঁচু করে বাংলাদেশি পতাকা দেখিয়ে তাদের গুলি না করতে ইশারা করছিলাম। এরপরও তারা মানেনি, গুলি করতে থাকে।’
অপর ট্রলার মালিক মতিউর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার নৌবাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়া ট্রলারসহ মাঝি-মাল্লাদের ফেরত দিয়েছে। আমাদের ট্রলারে থাকা মাছ ও টাকা-পয়সা লুটপাট করেছে এবং প্রচুর মারধর করছে।’
আহত জেলে মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘অলি আহমেদ ট্রলার নিয়ে গত চার দিন আগে ১০ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাই। বুধবার ভোরে সাগরে মিয়ানমারের অংশ অবস্থান নেওয়া মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সংকেত দিয়ে তাদের দিকে যেতে বলে। ওটা মিয়ানমারের জলসীমা হওয়ায় তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে চলে আসতে থাকে। এ সময় পরপর গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, অন্যরা অক্ষত আছে।’
ফিরে আসা আরেক জেলে করিম উল্লাহ বলেন, ‘বুধবার দুপুর ২টার দিকে সেন্টমার্টিন অদূরে আমরা ৬টি ট্রলার এক সঙ্গে মাছ শিকার করছিলাম। হঠাৎ মিয়ানমার নৌবাহিনী আমাদের ট্রলারকে তাদের কাছে যেতে সংকেত দেন। ছয়টি ট্রলারের মধ্যে পাঁচটি ট্রলার তাদের কাছে গেলে প্রথমে ট্রলারে থাকা মাছ ও মোবাইল, টাকা-পয়সা নিয়ে নেয় এবং অমানবিক নির্যাতন করে আমাদের ওপর। পরে কায়সারের মালিকানাধীন ট্রলারকে কাছে আসার সংকেত দিলে তারা উল্টো ট্রলার চালালে তখন তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে একজন মারা যায়, বাকি দুজন গুলিবিদ্ধ হয়।’
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি মাছ শিকার করে ফেরার সময় একটি ট্রলারকে গুলি করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারে থাকা একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত জেলেকে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের সীমান্তে নৌবাহিনীর গুলিতে এক জেলে নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন। হতাহতদের বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।