বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন শাকিব খান

বিনোদন প্রতিবেদক
১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৪৪
শেয়ার :
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন শাকিব খান

চিত্রনায়ক শাকিব খান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা। ভক্ত-দর্শকদের ভালোবাসায় হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার। শাকিব খানের সিনেমা মানেই হিট- এমনটি স্বীকার করেন পরিচালকরাও। আর তাই তো উৎসব ঘিরে এই নায়ককে নিয়ে নির্মাতাদের আগ্রহও থাকে তুঙ্গে। শুধু দেশেই নয়, ওপার বাংলাতেও (ভারত) শাকিবের ভক্তদের সংখ্যা নেহাত কম না। যার প্রমাণ মেলে স্টেজ শোগুলোতে।

দুই বাংলায় দাপিয়ে বেড়ানো এই চিত্রনায়ক মুখোমুখি হয়েছেন ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের। কথা বলেছেন ব্যক্তিজীবন ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে।

কথার শুরুতেই শাকিব খান জবাব দেন; বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন কেমন আছেন? প্রশ্নের। উত্তরে ঢাকার এই নায়ক বলেন, ‘খুব ভাল আছি। আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে।’

বাংলাদেশের সিনেমা থেকে গান দুই দেশের একটা সহজ চলাচল ছিল, সেই সময় এমন পালাবদল। ফেসবুকে ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য, কী মনে হয়, এভাবে কী সিনেমার শিল্পের উন্নতি সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশের ইলিশ মাছ তো ঠিকই যাচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররা খেলতে যাচ্ছেন, বিভিন্ন কূটনৈতিক আলোচনাও হচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের পরস্পরের মিলেমিশে থাকা উচিত। তেমনটাই তো দেখছি। কিছু মানুষ এখান থেকে এক কথা বললে, ওখান থেকেও কিছু মানুষ বাংলাদেশ নিয়ে কুমন্তব্য করছেন! মানুষের আবেগের জায়গা থেকে মতামতের একটা বিভেদ থাকতে পারে। আর সম্পর্ক থাকলে ভাঙাগড়া থাকেই। কিছুদিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়। এসব নিয়ে আমি একদমই ভাবি না। সমস্যা থাকলে দুই দেশের নীতি নির্ধারকেরা তার সমাধান খুঁজে বের করবেন। আমি মনে করি, এশিয়ান হিসেবে আমাদের মিলেমিশে থাকা উচিত।’

নায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয় রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর প্রসঙ্গেও। একজন বড় তারকা হিসেবে সেটি তিনি কীভাবে দেখছেন? উত্তরে শাকিব খান বলেন, ‘এমন একটা ঘটনার পর সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সময় লাগে। আমাদের এখানকার একজন শিল্পীর ছবি যখন পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেল, তখনই ওখানকার একটি আন্দোলনের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ল সেটা। সব জায়গায় কমবেশি ওলট-পালট থাকে। দেশের সংকটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক।’

সঙ্গে যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষই অনেক কিছু ভাঙে। আবার তারাই গড়ে! নতুন কিছু এলে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। তাই সব কিছু আবার যে ভাবে গড়ে উঠছে, আমি আশা করছি সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে কাজে মনোযোগী হয়েছেন। আমি আশা করছি, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আগের চেয়ে আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।’

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাকিবের নিশ্চুপ থাকার প্রসঙ্গটিও আনা হয়। গণমাধ্যমের প্রশ্ন- আপনার দেশের একটা বড় অংশের দর্শক পালাবদলের সময় আপনার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান, অনেকে বলছেন আপনি নাকি দেশেই ছিলেন না?

উত্তরে শাকিব বলেন, ‘আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতাটা দেখলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশে গন্ডগোলের আগেই দুবাই সরকার থেকে আমাকে গোল্ডেন ভিসা ও রেসিডেন্সি দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল দুবাইয়ের কাজ সেরে ছুটি কাটানোর জন্য দু’সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে থাকব। ওখানে আমার একটা বাসস্থানও রয়েছে। দুবাই গিয়ে প্রথম জানতে পারি দেশের এমন অবস্থা। তাৎক্ষণিক আমি আমার যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও মানুষের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছিলাম। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় একাধিকবার মানুষের পক্ষে সমর্থন দিয়ে পোস্ট দিয়েছি। আগেও বলেছি, আমি অরাজনৈতিক মানুষ। সবসময় দেশ ও মানুষের পক্ষে এবং তাদের জন্য আমি সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।’

শাকিবের আর এক নাম বাংলাদেশে ‘কিং খান’, ভারতে শাহরুখ খানকে এই নামে ডাকা হয়। আপনি তার সঙ্গে নিজের কোনো মিল খুঁজে পান? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাকিব খান বলেন, ‘শাহরুখ খান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মহাতারকা। এশিয়া মহাদেশের তারকাদের কাছে উনি অনুপ্রেরণার আর এক নাম। আমি মনে করি, শুধু ভারত নয়, সমগ্র মহাদেশের গর্ব তিনি। তার সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই ওঠে না, আমি চিন্তাও করিনি কখনও এমন। তবে মানুষ একটু হলেও তার মতো করে আমাকে ভালবাসেন; বোধ হয় এই মিলটুকু খুঁজে পাই। এটাই ভাল লাগার জায়গা।’

দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে শাকিব কথা বলেন ব্যক্তিজীবন নিয়েও। জানতে চাওয়া হয়- বাবা হিসেবে দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা। উত্তরে এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘ওরা এখনও অনেক ছোট। বুঝতে শেখেনি। ওরা স্কুলে যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে। বাবা হিসেবে আমি ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। আমি চাই ওরা আমার চেয়েও অনেক বড় হোক। ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য যা যা করতে হয় বাবা হিসেবে আমি করে যাব।’

প্রশ্ন করা হয়, বিয়ে নিয়ে নায়কের জীবনে নানা কাটাছেঁড়া হয়েছে, মানুষ শাকিবকে কতটা আঘাত দেয়? শাকিব বলেন, ‘আঘাত তো দিয়েছেই। কোনো ভাঙনই তো সুখের নয়। যতটুকু হয়েছে, হয়ত সেটুকুই হওয়ার ছিল। “লাইফ ইজ় আ জার্নি”। এই যাত্রায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, পরিচয় হয়। আমার জীবনে দু’জন (অপু-বুবলী) মানুষ অতীত, এটা আগেও বলেছি। অতীত হিসেবে তারা থাকুক। এসব নিয়ে আমার আক্ষেপ-ভ্রুক্ষেপ কিছুই নেই। যা হয়েছে হয়তো ভালোর জন্য হয়েছে। আমার দুই সন্তান, বাবা-মা, বোন ও তার পরিবার, কিছু কাছের আপন মানুষ, আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং দেশ-বিদেশের কোটি কোটি ভালবাসার মানুষ রয়েছে, যারা আমাকে অঢেল ভালোবাসা দেন; তাদের সবাইকে নিয়ে আমি খুব ভাল আছি।’

সবশেষ জানতে চাওয়া হয়- শোনা যাচ্ছে শাকিব খান নাকি ফের বিয়ে করবেন, তাও আবার আয়োজন করে। পাত্রী নাকি চিকিৎসক! সত্যিই কী কখনো ফের সংসারী হবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘মানুষ একা থাকতে পারে না। পরিবার এবং সমাজ নিয়ে বেঁচে থাকে। দেখা যাক, কোনো তাড়াহুড়ো নেই যে নির্দিষ্ট কোনো বছরের মধ্যে বিয়ে করতে হবে। যদি তেমন কিছু হয় পারিবারিক ভাবে হবে এবং সেটা বিয়ের পর্যায়ে যাবে। আমার বাবা-মার যেহেতু বয়স হয়েছে সন্তান হিসেবে তারা আমাকে সংসারী দেখতে চান।’