হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
বিএনপির পক্ষ থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার দুর্গাপূজার ষষ্ঠীতে রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক এই কামনা করছি, এই প্রত্যাশা করছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সকলকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা সাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র একটা সমাজ নির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
এই অনুষ্ঠানে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন, সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি। মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যে সহানুভূতি সেটা আমাদের রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল, আমি নাম বলতে চাই না তারা বরাবরই বলে থাকে তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন অতীতে যতোগুলো ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই সেখানে ছিল এবং বাংলাদেশে আপনাদের সম্প্রদায়ের মানুষের যত জমি-জমা,সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হয়েছে তার মূলেও তারা ছিল।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
মহাসচিব আরও বলেন,‘আমরা এই কথাটা বলতে পারি আগামীতে আমাদের যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, আপনারা জানেন এটা আমাদের সরকার নয়, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের সরকার আসলে প্রতিটি ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবই।’
৮ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘আমাদের ওপর যেসব অন্যায় হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে। আমরা তার ন্যায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আশা করি আপনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন, আপনার দল আমাদের সঙ্গে থাকবে। কেনো আশা করি? ৫ আগস্টের পরেও আপনার দলের নেতাকর্মীরা আমাদের মন্দির পাহারায় ছিলেন। আমাদের বাড়িঘর পাহারায় ছিলেন। সেজন্য আজকের দিনে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারাদেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে আশা তৈরি হয়েছে সেই সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশি কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচার মাধ্যম তারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে যা একেবারেই সত্য নয়। ঘটনা ঘটেনি সেকথা আমি বলব না। কিছু ঘটনা ঘটেছে তা কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিলো না তা ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম-লড়াই করেছি। এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার বেড়াজালে আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত আটক আছি। কিছুদিন আগে যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হলো সেখানে প্রায় ১৫০০ ওপরে ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আমার দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি-এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর।’
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া দুর্গা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান। মন্দিরে প্রবেশ করে মির্জা ফখরুল পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং আগত পূর্ণার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে ঢাকার মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুববিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ধর্মবিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে বিএনপির মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের ইসহাক সরকার, হামিদুর রহমান হামিদ, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্য সচিব তপন দেসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিএনপি মহাসচিব দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বনানী পূজামণ্ডপও পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান। মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব দুর্গা পূজার প্রথম দিনে ষষ্ঠীতে ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে আসার জন্য বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাদের ধন্যবাদ জানান।