খল চরিত্রের নায়িকারা
সিনেমায় নায়ক-নায়িকার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে খলনায়ক বা নায়িকা। গল্প ফুটিয়ে তুলতে তাদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। বাংলা চলচ্চিত্রের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেই অভিনয় করেছেন খলনায়িকা চরিত্রে। আবার অনেক নায়িকাও মাঝেমধ্যে পর্দায় হাজির হয়েছেন খল চরিত্রে। আমাদের আজকের আয়োজন তেমন কিছু অভিনেত্রীকে নিয়ে। লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ
সুষমা আলম
বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে খলনায়িকাদের মধ্যে অন্যতম সেরা একজন অভিনেত্রী। তিনি যেসব ছবি করেছেন সেগুলোতে সাংসারিক অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল অভিনয়ের গুণে। সুষমা আলমের নেতিবাচক অভিনয় ছিল দুর্দান্ত। চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরতÑ এমন বাস্তব অভিনয় করতেন। পজেটিভ চরিত্রে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে ছিলেন, যার মধ্যে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ অন্যতম। এ ছবিতে রাজকুমার ইলিয়াস কাঞ্চনের মা ছিলেন। ব্যতিক্রমী ছিলেন ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবির জলহস্তিনী চরিত্রে। খলিলের পার্সোনাল সেক্রেটারি ছিলেন, তার হুকুমমতো কাজ করেন। কমেডি চরিত্র ছিল এবং এ ধরনের চরিত্রেও তার ন্যাচারাল অভিনয় প্রমাণ করে তিনি বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন।
রীনা খান
সেই আশির দশকের শুরু থেকে ২০০০ পরবর্তী ছবিতেও অভিনয় করেছেন দাপটের সঙ্গে। শাকিব খানের প্রথম ছবি ‘অনন্ত ভালোবাসা’-তেও তিনি ছিলেন। তার খলনায়িকার চরিত্র সিনেমা হলের পর্দা কাঁপাত। শাবনূরের সঙ্গে ‘বউ শাশুড়ির যুদ্ধ’ ছবিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা দর্শক ব্যাপকভাবে উপভোগ করেছে। মৌসুমীর সঙ্গে ‘বাংলার বউ’ ও ‘দজ্জাল শাশুড়ি’ ছবি দুটিতেও দর্শক তাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে। ‘দজ্জাল শাশুড়ি’-তে রীনা খানকে খুব নৃশংস দেখানো হয়েছে এবং তিনি সেটা পেরেছেনও তার অভিনয়ের শক্তিতে। তার কাছে অভিনয় করে তৃপ্তি পাওয়ার মতো দুটি ছবি তিনি বলেছেন ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ও ‘পড়েনা চোখের পলক।’ রীনা খানের অভিনয়ের দক্ষতা বা নিজস্বতা বিচার করলে দাঁড়ায়Ñ তার অসাধারণ ভয়েস, চোখের ব্যবহার, ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো বডি ল্যাংগুয়েজ। ছবির নায়ক-নায়িকা যতই আলোচিত থাকুক, তিনি নিজের গুণে দর্শকের মনোযোগ পেয়ে যেতেন।
নূতন
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা নূতন বর্তমানে খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছেন। ‘মাই নেম ইজ খান’সহ বেশ কিছু ছবিতে খলনায়িকা হয়েছেন। বজলুর রাশেদের ‘দেশ নায়ক’ ছবিতে নূতনও খলনায়িকা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
দুলারী
আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত খলচরিত্রে অভিনয় করছেন দুলারী। পরোপকারী ও সমাজসেবক হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন।
শবনম পারভীন
শবনম পারভীন ১৯৮৫ সালে কেএম আইয়ুবের ‘আগুন পানি’ চলচ্চিত্রে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৮৬ সালে ‘শুকতারা’ ছবিতে খলনায়িকা চরিত্রে প্রথম অভিনয় তার। এ পর্যন্ত শতাধিক ছবিতে খলনায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে আসার আগে মঞ্চে অভিনয় করতেন তিনি। শবনম বলেন, গ্রুপ থিয়েটারের একটি নাটকে আমার অভিনয় দেখে আইয়ুব সাহেব তার ‘আগুন পানি’ ছবিতে কাজের সুযোগ করে দেন। এ পর্যন্ত শতাধিক ছবিতে খলনায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ছোট পর্দায়ও রয়েছে তার ব্যস্ততা। দীর্ঘদিন ধরে হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নাট্যাংশে নানীর চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
জাহানারা ভূঁইয়া
অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া সত্তরের দশকে চলচ্চিত্রে যুক্ত হন। একাধারে অভিনেত্রী, গীতিকার ও নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছেন জাহানারা। চলচ্চিত্রে তার আত্মপ্রকাশ গীতিকার হিসেবে। স্বামী চিত্রপরিচালক সিরাজুল ইসলামের ‘নিমাই সন্ন্যাসী’ ছবিতে প্রথম গান লেখেন। আশির দশকে ‘সত্মা’ ছবিতে খলনায়িকা চরিত্রে অভিনয় শুরু। তা ছাড়া চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী। ‘সিঁদুর নিওনা মুছে’ তার পরিচালিত ছবি। শিশুশিল্পী চরিত্রে এক সময় অভিনয় করা শিরীন জাহান আঁখি তার কন্যা।
দীপা খন্দকার
টিভি নাটকের জনপ্রিয় মুখ দীপা খন্দকারকে মাঝেমধ্যে দেখা যায় সিনেমায়। তার অভিনীত তৃতীয় সিনেমাতেই তিনি হাজির হয়েছিলেন খল চরিত্রে। ছবির নাম ‘রিভেঞ্জ’। আগের ছবিগুলোতে তিনি নায়কের বোন ও মায়ের মতো সহনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। খল চরিত্রে এই প্রথম। চলচ্চিত্রটিতে তার স্বামীর ভূমিকায় ছিলেন আরেক খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। অভিনয় শুরুর পর থেকেই এ ধরনের চরিত্রের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল।
বর্ষা
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়ক অনন্ত জলিলের হাত ধরে রুপালি পর্দায় আগমন ঘটে নায়িকা বার্ষার। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এবার তাকে ‘কিল হিম’ সিনেমায় খলনায়িকা হিসেবে দেখা গেছে। মো. ইকবাল পরিচালিত এ সিনেমাটিতে বর্ষাকে ভিলেন হিসেবে দেখা গেলেও তার বিপরীতে দেখা গেছে অনন্ত জলিলকেই। সিনেমাটিতে তিনি একজন এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।