দিনটি ঘিরে থাকে ভক্তদের পাগলামি, ভালোবাসা

তারেক আনন্দ
০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
দিনটি ঘিরে থাকে ভক্তদের পাগলামি, ভালোবাসা

আজ রকস্টার, নগর বাউল, গুরুর জন্মদিন। এসব বিশেষণেই ভক্তরা তাকে ডাকেন। তিনি জেমস, মাহফুজ আনাম জেমস। আমাদের গুরু জেমস। নামটি শুনলেই একটি ছবির মতো ভেসে ওঠে সবার মননে, ভেসে ওঠে এক রকস্টারের অবয়ব। যার গানে বহুরাত নির্ঘুম কেটে যায় হাজারো তরুণের, যিনি না থাকলে জমে না কোনো উৎসবের আসর। সংগীতের এই কালপুরুষ ৬০ বছর বয়সে পা রাখলেন। বরাবরের মতো এবারের জন্মদিনেও নিজ থেকে তিনি কোনো আয়োজন করছেন না। তবে প্রতিবছরের মতো ভক্তদের নানা আয়োজন ও সেই সঙ্গে থাকে পাগলামি, ভালোবাসা।

দিনটি ঘিরে জেমস নিজে যত না উদযাপন করেন, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি উদযাপন করে থাকেন ভক্তরা। তাদের নানা পাগলামির খবর ভেসে আসে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায়। কোনো ভক্ত জেমসকে চমকে দিতে দেড় হাজার কেজি ওজনের কেক বানান। কেউবা ঢাকা শহরে টাঙিয়ে দেন বড় বড় বিলবোর্ড। বাসে বাসে দেখা যায় জন্মদিনের শুভেচ্ছাসহ পোস্টার। এবারও হয়তো ভিন্ন রকম আয়োজনে গুরুকে চমকে দেবেন ভক্তরা।

এমন পাগলামি শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্তের মাঝে। জন্মদিন নিয়ে খুব একটা ভাবেন না জেমস। সেভাবে উদযাপনও করেন না। ভক্তরা জেমসের কাছে আসেন, শুভেচ্ছা জানান; দুষ্টু ছেলের দলের এসব পাগলামি তার ভালোই লাগে। জেমস বলেন, ‘ওদের কারণেই তো আমি জেমস। ওদের কাছ থেকে এমন পাগলামি দেখে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। ওরা আমাকে ভালোবেসে যাচ্ছে, আমিও ভালোবেসে যাব।’

জেমসের জীবন বেশ বাঁকবদলের, অনেক গল্পের। উত্তরবঙ্গের এই ছেলে নওগাঁর পত্নীতলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বাবার সঙ্গেই ঘুরে বেড়াতে হতো। বাবা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান হলেন, আর তাকেও থাকতে হলো চট্টগ্রামে। সেখান থেকে মাথায় উঁকি দিল নতুন পাগলামি। সংগীত নিয়ে পাগলামি। ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় তার বাবা যখন বুঝলেন ছেলের আর পড়াশোনা সম্ভব নয়, তখন ঘর থেকে তাকে বের করে দেওয়া হলো। ঠাঁই হলো চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। আর সেখানেই হয়ে ওঠে তার গানের জগৎ। আজিজ বোর্ডিং জেমসের জীবনে বিশাল স্মৃতিময় রেখা আলোকপাত করে গেছে। ফলে জেমস এখনো স্মৃতিকাতর হন তার অতীতের সে সময়কে নিয়ে।

’৮৬ সালে ঢাকায় এসে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ করেন। এর পরই আসিফ ইকবালের লেখা ‘অনন্যা’ জেমসের প্রথম একক অ্যালবাম, যেটি বের হয় ১৯৮৭ সালে। যার প্রতিটি গানই অসাধারণ। বিশেষ করে ‘অনন্যা’ কিংবা ‘ওই দূর পাহাড়ে’ গানগুলো বুকের মাঝে সত্যিই কাঁপন জাগায়। তবে এই গান শুনে কারও পক্ষে ধারণা করা সম্ভব হবে না যে, গানটি জেমস গাইছেন। তার পর ‘জেল থেকে বলছি’। অডিও বাজারে বড় ধরনের একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ‘জেল থেকে বলছি’ নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে ভেরিয়েশন ইমেজ তৈরি করে ফেলে। এই সময়টাকে অডিও বাজারের চরম সফল যুগ বলা হয়।

১৯৯৫ সালে জেমসের দ্বিতীয় একক বের হয়। ‘পালাবে কোথায়’ অ্যালবামের ‘প্রিয় আকাশি’ গানটি জেমসকে আরও রহস্যময় করে তোলে। সেই বছরে প্রিন্স মাহমুদের প্রথম ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম ‘শক্তি’তে দুটি গান করেন। ’৯৬ সালে ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’ অথবা কবি শামসুর রাহমানের ‘সুন্দরীতমা আমার’ তখন পাড়া-মহল্লায় বড়-ছোট সবার মুখে। জেমস যে শুধুই জেমস- এই দুর্লভ সত্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’। এই অ্যালবাম এতটাই শ্রোতাপ্রিয়তা পায় যে, ব্যান্ড বলতে যাদের নাক সিটকে যেত, সেই মুরব্বিরাও মনোযোগ দিয়ে শুনলেন ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’।

২০০৪ সালে কলকাতার সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসের বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সালে আবার বলিউডের ছবিতে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুটি হলো- ‘রিশতে’ এবং ‘আলবিদা’। আর তাতেই বাজিমাত। সেই আশির দশকের ‘স্টেশন রোড’ থেকে আজও তিনি সমানভাবে আমাদের মুগ্ধ করে রেখেছেন। টানা এক যুগ বিরতির পর ভক্তদের গানে গানে ‘আই লাভ ইউ’ জানান জেমস। এ গানটি প্রকাশ করেন ২০২২ সালে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রকাশ করেন ‘সবই ভুল’। আজও অনেকেই সেই ৯০ দশকের মতো প্রতীক্ষা করেন তার নতুন গানের। ষাট বছরের এই তরুণ নতুন নতুন গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখুক।

অ্যালবাম ও গান

ব্যান্ড অ্যালবাম

জেমসের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড (১৯৮৭), জেল থেকে বলছি (১৯৯০), নগর বাউল (১৯৯৬), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯), দুষ্টু ছেলের দল (২০০১) প্রভৃতি।

একক অ্যালবাম

জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করো না (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)।

জনপ্রিয় ১০ গান

বাংলাদেশ, জেল থেকে বলছি, মা, দুঃখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া উল্লেখযোগ্য।