কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি, বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
তিস্তার পানি কমতে শুরু করলেও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি আর উজানে ভারত থেকে আসা পানিতে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র, রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী রক্ষা বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ও শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে গতকাল রবিবার রাত ১১টার পর থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যার ক্ষতি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন আতঙ্ক।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হতে পারে।
পাউবো জানায়, তিস্তায় গতকাল বরিবার রাত থেকে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে, আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি কমে তা বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকা মনির মিয়া বলেন, ‘ঘরের ভেতর নদীর পানি ঢুকে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়ি ঘরে থাকতে হচ্ছে। ’
পাকার মাথা এলাকার বাসিন্দা নবিয়ার রহমান বলেন, ‘আকষ্মিকভাবে তিস্তায় পানি বাড়ায়, আমরা বন্যার প্রস্তুতি নিতে পারি নাই। এজন্য আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির ধান চাল, অনেক কিছু পানির নিচে চলে গেছে, বর্তমানে বাঁধে বসবাস করছি।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক ছামাদ আলী বলেন, ‘তিস্তাপাড়ে অসময়ে বন্যা পরিস্থিতিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘরের ভেতর এখন ২-৩ ফুট পানি। বানের পানি নামছে। পানি নামার পর দেখা দিবে নদীভাঙন। আমন নিয়ে চিন্তিত নন তারা। তবে পানির নিচে তলিয়ে থাকা শাক-সবজির ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত। ’
তিনি আরও জানান, ‘পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ভাঙন, কয়েক বাপ দাদার ভিটা হারিয়েছি, এবার যে আবার কি কপালে আছে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে জন প্রতি ১০ কেজি হারে ১৫ মেট্রিক টন জিআরের চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও শুকনা খাবার পরিবারের মধ্যে চিড়া-মুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ’
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইখুল আরিফিন বলেন, ‘তিস্তাপাড়ে বন্যায় আগাম শীতকালীন শাক-সবজির অনেক ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে এসব ফসলের বেশ ক্ষতি হবে।’
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হতে পারে। নদীর পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
লালমরিহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। তিস্তাপাড়ে পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ’