তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম ও হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০৭
শেয়ার :
তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে ভারি বৃষ্টির প্রভাবে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। ইতোমধ্যে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। সাথে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি, কখনো আবার ভারি বৃষ্টি হচ্ছে গোটা উত্তরাঞ্চলে। ভারি বর্ষণের কারণে নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে আজ শনিবার বিকেল ৩ টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কুড়িগ্রামের কাউনিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসীরা জানান, ভারতের সিকিমে উৎপত্তি স্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি হওয়ায় ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে তিস্তার পানি একক ব্যবহার করছে তারা।

বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল।

এদিকে কুড়িগ্রামের ভিতরে তিস্তা নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকায় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রাজার হাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, রামহরি এলাকায় নদী তীরবর্তী পানি ঢুকে পড়েছে। এ এলাকার মানুষজন আবারও বন্যা ও নদীভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আছে। এর ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলে আগামী দুই দিন পর্যন্ত পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন পর্যন্ত নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী দুইদিন পর্যন্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এসব জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। অপরদিকে আগামী তিন দিন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী চার দিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কুড়িগ্রাম ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক জানান, কিছুদিন আগে বন্যায় মানুষের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও তিস্তার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট ইতোমধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজকের মধ্যে কুড়িগ্রাম তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, নদ- নদীর পানির খবর সার্বক্ষণিক নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।