গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, আটক ৪

নোয়াখালী প্রতিনিধি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৪৫
শেয়ার :
গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, আটক ৪

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হাত-পা বেঁধে গৃহবধূকে (৩০) নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার  চরজব্বর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বামীসহ তার পরিবারের চারজনকে আটক করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার ৫২ সেকেন্ডের গৃহবধূ নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিডিওটি গত ১৩ আগস্ট রাতে নির্যাতনের সময় ধারণ করা বলে নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগীর ভাতিজা কামাল। তিনি নিজেই ওই ভিডিও ধারণ করেছেন বলে জানান।

এ ঘটনায় আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চর মজিদ গ্রামের ভুক্তভোগীর স্বামী নুর নবী (৩৫), নুর নবীর বড় ভাই শেখ ফরিদ (৪০), নুর নবীর বড় বোন ছায়েরা খাতুন (৪২), ভাইয়ের ছেলে সাইফুল ইসলাম হাসান (২০)।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, তিন সন্তানের ওই জননীকে একটি রশিতে হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিছানাবিহীন একটি খাটে শোয়া অবস্থায় ওই নারী নানা অভিযোগ করছেন ভিডিও ধারণকারীকে। এ সময় তার সন্তানদের কাছে আসতে না দেওয়ারও অভিযোগ করা হয়। ভিডিওতে ওই গৃহবধূকে খাওয়ার পানি চাইতেও শোনা যায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ১৩ আগস্ট স্বামী নুর নবী, শ্বশুর আবদুল হাদি ওরফে হাদু, ভাসুর শেখ ফরিদসহ ৯ জন মিলে তাকে এভাবে বেঁধে ব্যাপক নির্যাতন করেন। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করতে আসেন এবং তখন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, ১২ বছর আগে পারিবারিকভাবে ওই গ্রামে তার বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি (ভুক্তভোগী) ভিক্ষা করে সংসার চালান। এর মধ্যে তাদের এক মেয়ের হৃদরোগের সমস্যা থাকায় চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। এজন্য স্থানীয় কয়েকটি বাজারে ভিক্ষা করে ১৫ হাজার টাকা জোগাড় করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভিক্ষা করে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে তার স্বামী ‘পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের’ অভিযোগ তুলে প্রায়ই তাকে গালমন্দ করতেন। এভাবে পারিবারিক কলহ দেখা দিলে কিছুদিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি ঢাকা চলে যান। পরে গত ১৩ আগস্ট রাতে শ্বশুরবাড়ির পাশের বেলাল সওদাগর নামের এক ব্যক্তি ভরসা দিয়ে তাকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। সেদিন রাত ১২টার দিকে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে স্বামী ছাড়াও তার শ্বশুর, ননদ, জা, ভাসুরের ছেলে, ভাগনে জড়িত ছিল।

তিন সন্তনের জননী ওই নারী বলেন, ‘আমি এতিম। আমার মা-বাবা কেউ নেই। আমার খালাতো ভাইয়েরা আমাকে লালনপালন করে বিয়ে দিয়েছেন। খবর পেয়ে তারাই আমাকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর আগেও ১০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য স্বামী নুরনবীসহ তার পরিবারের লোকজন আগে থেকেই আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে।’

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যাণ্ড অপস্) মো. ইব্রাহীম জানান, গৃহবধূর হাত-পা বাঁধা একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার খবরে ওই নারীরর সঙ্গে কথা বলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অভিযুক্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে আসামিদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।