১৩ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’, রুয়েটের ৯ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল দুদক
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করার প্রকল্পের ১৩ কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়ে ৯ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন গত ২২ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়ে অভিযুক্ত ৯ কর্মকর্তাকে তলব করেন।
রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘দুদক প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়েই ডেকেছিল। আমি গিয়েছিলাম। তারা জানার চেষ্টা করেছে, ওই প্রকল্পের সময় আমাদের কী ভূমিকা ছিল। আমি আমার বক্তব্য দিয়ে এসেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করে এসেছি’।
চিঠিতে তাদের ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি’ হিসেবে দুদক যাদের তলব করেছে তারা হলেন- সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবীব, সুপারিটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) শাহাদাৎ হোসেন, সুপারিটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার (ইলেক্ট্রিক) অমিত রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত কম্পোট্রোলার নাজিম উদ্দিন আহম্মদ, ডেপুটি কম্পোট্রোলার ফয়সাল আরেফিন, ডেপুটি নিরীক্ষা কর্মকর্তা মেসবাউল আরেফিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী রেজিস্ট্রার মুক্তার হোসেন, আব্দুর রায়হান এবং আতিকুর রহমান। চিঠিতে আহসান হাবিব, অমিত রায় চৌধুরী ও শাহাদাৎ হোসেনকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আলাদা আলাদা সময়ে ডাকা হয়। তারা সময়মতই দুদক কার্যালয়ে যান এবং দুদক কর্মকর্তাদের জেরার মুখে পড়েন।
অন্য ছয় কর্মকর্তাকে ডাকা হয় আজ বুধবার। তাদেরকেও দুদক কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীমের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রুয়েটে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করার প্রকল্পে প্রায় ১৩ কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্ত করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের ১ জুলাই ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ৩০ জুন করা হয়। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মোট পাঁচজন। সবশেষ প্রকল্প পরিচালক ছিলেন রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলীম। প্রকল্প চলাকালে তিনি রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক ছিলেন।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হলে ৯ আগস্ট আব্দুল আলীম প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) প্রতিবেদন পাঠান। এতে তিনি প্রকল্পের বরাদ্দের ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার সবই ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তবে ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ যেদিন শেষ হয়, সেদিনও প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে ছিল ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা। এরপর ২০১৭ সালের ১ মার্চ ছিল ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা। ধীরে ধীরে ব্যাংকের টাকা কমতে থাকে। ২০২০ সালের ৩০ জুন ব্যাংকে ছিল মাত্র ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা। প্রকল্প শেষেও বেঁচে যাওয়া প্রায় ১৩ কোটি টাকা নয়ছয় করার সত্যতা ইউজিসির তদন্তেও উঠে আসে।
গত ২১ এপ্রিল দুদকের প্রধান কার্যালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য অনুমোদন দেয়। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এই ৯ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, ‘প্রকল্পের অবশিষ্ট টাকা এখনো ব্যাংকে পড়ে আছে। দুদক আমাকে ডেকেছিল। আমি সেখানে আমার বক্তব্য জানিয়েছি’।