ভারত কখনোই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করেনি: শারমিন মুরশিদ

অনলাইন ডেস্ক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:১৯
শেয়ার :
ভারত কখনোই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করেনি: শারমিন মুরশিদ

ভারত কখনোই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করেনি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বিরাজমান আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী বিপ্লব পরবর্তীতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সম্পর্কের গতিবিধি নিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে, প্রশ্ন রেখে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বে কার কি আসে যায়। বাংলাদেশ কীভাবে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেউ বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়টি গুরুত্ব দেয় না। না ভারত, না চীন, না যুক্তরাষ্ট্র, কেউই বাংলাদেশের বন্ধুত্বের গুরুত্ব দেয় না। আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বৈরিতায় উদ্বিগ্ন কে? বাংলাদেশের বন্ধুত্ব বা বৈরিতা কোনোটাই গুরুত্ব বহন করে না। ফলে আমাদের নতুন একটি পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করতে হবে। আর এটি হতে হবে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে।’

শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে একজন ব্যক্তিকে এবং তার রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করেনি। এ নিয়ে বহু উদাহরণ রয়েছে। ভারত কখনোই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করেনি। বাংলাদেশে যখনই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, ভারত কখনোই তার প্রতিবাদ জানায়নি। যখন বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতিকদের জেলে ভরা হয়েছে, তখন কখনোই ভারত এর প্রতিবাদ করেনি। তবে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে জনগণ শুধুই গণতন্ত্র এবং সামাজিক সুবিচার চেয়েছে। বাংলাদেশ কখনোই ভারতকে এদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে পাশে পায়নি। তবে আমি বিশ্বাস করি ভারত বাংলাদেশ নিয়ে তার অবস্থান এখন নতুন করে ঢেলে সাঁজাবে।’

ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের বিদ্যমান যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তা ভারতেরই আমলে নিতে হবে। যেমন পানি সমস্যা, ৫৭টি নদী বা তিস্তা, আরও উদাহরণ দেওয়া যায়। এ সমস্যাগুলো সংবেদনশীল হয়ে সমাধান করতে হবে।’

ভারত থেকে অসত্য তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে দাবি করে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘এক্ষেত্রে ভারতের জন্য যেটি স্বাচ্ছন্দ হয়েছে, সেটিই ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি হচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম নেই, যারা বাংলাদেশের সত্যগুলো তুলে ধরবে। ৫৩ বছর পার হয়েছে কিন্তু আমাদের এ সক্ষমতা নেই। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর গুরুত্ব কখনোই দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়েছিল ধর্মের কারণে। আর ১৯৭১ হয়েছিল সংস্কৃতির ভেদাভেদের কারণে। পাকিস্তান কখনোই বাঙালি সংস্কৃতি বোঝেনি। তারা বাঙালিদের বিদেশি মনে করত এবং মেনে নিতে পারেনি। আর ভারত কখনোই বাংলাদেশিদের ইসলামিক ঐতিহ্য বোঝেনি। তারা কখনোই মেনে নিতে পারেনি যে বাঙালিরাও মুসলিম হতে পারে। ভারতীয়রা বলে থাকে ‘‘আপনি বাঙালি? আমি মনে করেছিলাম ‌‘মুসলিম’’। আমি এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি।’

শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘বড় শক্তিগুলো তাদের ছোট প্রতিবেশীদের বুঝতে পারে না- এটা ঐতিহাসিকভাবেই বাস্তব। ফলে বাংলাদেশ বা বাঙালিকে- না পাকিস্তান না ভারত বুঝতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত ভারতীয়রা আমাদের বুঝতে পারে না, হতে পারে পাকিস্তানও আমাদের বোঝে না। যদিও এখন মনে হচ্ছে আমাদের বুঝতে শুরু করেছে।’

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশ স্বাধীনের যুদ্ধ করেছিল, তাদের যুদ্ধের পর নিজ গ্রামে খালি হাতে খালি পায়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তাদের দেশ গঠনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। এখান থেকেই আমাদের ভুলের শুরু। ২০২৪ সালে আমরা সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইনি।’

ভারত থেকে ভুল তথ্য ছড়ানো নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি ছিল অপ্রাতিষ্ঠানিক। সাধারণ ধারণা হচ্ছে সরকার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যেটি ঘটেছে তা শুধু এখানেই নয় দেশের বাইরেও একটি উদাহরণ। ফলে ভারতের বন্ধুদের থেকে এ প্রশ্ন শুনতে হয়েছে যে, কোনো রাজনৈতিক দলের বা বহির্বিশ্বের সমর্থন ছাড়া একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক আন্দোলন কীভাবে সরকার পরিবর্তন করল। এটি ভারতের জন্য নতুন, ফলে তাদের মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি করেছে।’