ছাত্রলীগ মব তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে: ছাত্রদল

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:০২
শেয়ার :
ছাত্রলীগ মব তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে: ছাত্রদল

ছাত্রলীগ পদধারী সন্ত্রাসীরা বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে হলগুলোতে অবস্থান নিয়ে মব তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামে ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে সংগঠনটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় সাংবাদিক সমিতিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির, সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে রাকিব বলেন, চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে আটকে রেখে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে একাধিকবার মারধরের কারণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহ্বান জানায় ছাত্রদল। 

সংবাদ সম্মেলনে রাকিব বলেন, অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বরাতে কিছু গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, ‘তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদসহ একদল শিক্ষার্থী। নির্যাতন করা শিক্ষার্থীদের সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।

ছাত্রদল মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কয়েক ঘণ্টা ধরে মারধর করে একজনকে হত্যা করার ঘটনা হল প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। ছাত্রলীগের পদধারী কতিপয় সন্ত্রাসী বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ‘মব’ তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী নামে সক্রিয় এই ‘মব’ কে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল উল্লেখ করে, অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রদল এ ধরণের বিচারহীনতার সংস্কৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী সংগ্রাম, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এদেশ থেকে সকল অন্যায়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূরীভূত করা। একজন ব্যক্তি অপরাধী হলেও তাকে কোনভাবেই হত্যার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু জনতার বিজয়ের পর থেকে কিছু অতিউৎসাহীর কারণে গণমানুষের এই আকাঙ্খাটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসের মূল সমস্যা নয়। গত কয়েক বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার মাঝে তৈরি হওয়া সিস্টেমই এখানে খুনি মানসিকতা তৈরি করছে। তাই গোটা ব্যবস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন। কোনো কিছু উপরে ফেলা সমাধান নয়। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল, আন্দোলনে অকাতরে নিজেদের জীবন দিয়েছে। সেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলোচনাটি হঠাৎ সামনে আনা একটি ভুল পদক্ষেপ।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ছাত্রদল মনে করে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতেই ক্যাম্পাসে মব কালচারের বিস্তৃতি ঘটছে। এর পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের হলে অবস্থান এবং নানান মোড়কে হল ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানার ব্যবহার করে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অশুভ উদ্বোধন ঘটানো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে।

রাকিব বলেন, এই গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের উত্তরাধিকার বহন করা এই কথিত ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ মুখোশ খসে পড়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী নামধারী এই মহলটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট ও অন্ধকার শক্তির গোপন তাঁবেদার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে এদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ না বলে মনে করে ছাত্রদল।