শিল্পীদের দ্বন্দ্ব এখন চরমে
গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দেশের প্রতিটি সেক্টরেই চলছে সংস্কার কার্যক্রম। যার হাওয়া লেগেছে ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় নিশ্চুপ ছিলেন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ ও এর নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে বিগত সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন সংগঠনের কর্তারা। ফলে সংগঠনটির সংস্কার দাবি করছে সংস্কারকামী শিল্পীরা। এ নিয়ে গেল ক’দিন ধরে শোবিজপাড়ায় চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা ইস্যুতে অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন অনেক অভিনয়শিল্পী। সংগঠনের ভেতরেও চলছে তুমুল দ্বন্দ্ব। গেল শনিবার দুপুরে রাজধানীর নিকেতনের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে জরুরি বৈঠকে বসেন একদল শিল্পী। ‘দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পী সমাজ’র ব্যানারে তারা সংগঠনটির সংস্কারের দাবি তোলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্তেখাব দিনার, আজমেরী হক বাঁধন, শ্যামল মাওলা, এফ এস নাঈম, সুষমা সরকার, এহসানুর রহমান, কাজী নওশাবা আহমেদ, খায়রুল বাসার, মনোজ প্রামাণিক, আহমেদ সাব্বির, নাদিয়া আহমেদ, নীলা ইস্রাফিল, মৌসুমি হামিদ, সোহেল মণ্ডল, নাজিয়া হক অর্ষা, মোস্তাফিজুর নূর ইমরানসহ ৪৭জন অভিনয়শিল্পী।
দীর্ঘক্ষণ চলা ওই বৈঠকে আলোচনা ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই মধ্যে তারা সামাজিক মাধ্যমে সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করেছেন। সেখানে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটিকে দুঃখ প্রকাশ ও জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) অভিনয়শিল্পী সংঘের কমিটি বিলুপ্ত করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এদিকে, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন আলাদাভাবে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমটির প্রতি ২১টি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। গেল রবিবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুকবার্তায় প্রশ্নগুলো তুলে ধরেন এই অভিনেত্রী।
এ অচলাবস্থা নিরসনে শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সাধারণ শিল্পীরা। আর পুরো বিষয়টি বিব্রতকর বলে মনে করছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম।
তার কথায়, ‘সদস্যরা এসে যদি আমাদের বলে কমিটি বাতিল করতে হবে। সাধারণ সভা ডেকে বাতিল করে দেব। সেটাও তো একটা প্রক্রিয়া আছে। ধরুন আমি পদত্যাগ করব কিংবা করতে চাই, সেটা তো একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করব কার কাছে? শিল্পীদের মধ্যে যা হচ্ছে, এ বিষয়গুলো তো আনন্দদায়ক না। এরই মধ্যে আমার সঙ্গে যারা বসেছিলেন, তারাই তো শুধু অভিনয়শিল্পীদের প্রতিনিধি নন। আরও প্রতিনিধি আছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমাদের যদি পদত্যাগ করতে হয়, করব।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলেন, ‘অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের নিয়ে শিগগিরই একটি সাধারণ সভা হবে। সংস্কার বিষয়েও সেখানে কথা হবে। ওই সভায় সাধারণ সদস্যরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মাথা পেতে নেব। আমরা গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি।’
অন্যদিকে ইন্তেখাব দিনার বলেন, ‘শিল্পীদের দীর্ঘদিনের না পাওয়ার বঞ্চনা থেকেই এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সব শিল্পীকেই মর্যাদা দিতে হবে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে অটল।’
শিল্পীদের দুটি পক্ষ হওয়া উচিত নয় জানিয়ে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘শিল্পীরা দুই পক্ষ হয়ে গেছে। এটি নিয়ে আমি বিব্রত। এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। আমি দুই পক্ষের কথাই শুনেছি। অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতারা একটি বিশেষ সাধারণ সভা ডেকেছে। সভায় বিষয়গুলো আলোচনা হবে। প্রত্যাশা করছি, সেই মিটিংয়ের মাধ্যমে এই বিষয়টির মীমাংসা হবে। আমি সেই মীমাংসার অপেক্ষায় আছি।’
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’
শিল্পীদের বিভাজন নিয়ে কথা বলেছেন বরেণ্য অভিনেতা তারিক আনাম খানও। তার কথায়, ‘গেল কয়েক মাস ধরে শিল্পীদের কাজকর্ম নেই। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে শিল্পীদের বিভাজন ভালো লাগছে না। বিভেদ-বিভাজন কখনই কাম্য নয়। আমি শুনব না; কথা না শুনলে থাকব না, ভেঙে দেব- এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামনে আমরা কীভাবে শুরু করতে পারি, এটি এখন ভাবার বিষয়। এই ইন্ডাস্ট্রিকে আগে বাঁচানো দরকার। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’