ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৯
শেয়ার :
ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি

কোটা সংস্কার ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হওয়া ছাত্র-জনতাকে যেসব চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদের তালিকা করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন (সনদ) বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল (বিএসএমএমইউ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সকল সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের অপসারণেরও দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। 

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থবিরতা ও ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুর্নবাসন এবং চিকিৎসক, কর্মকর্তাদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানির প্রতিবাদে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ বলেন, ‘চিকিৎসকরা এদেশের সচেতন নাগরিক। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের আত্মত্যাগ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগ যেমন আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিয়েছিল, তেমনি এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চিকিৎসক সমাজ ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে ডা. সজীবসহ একাধিক চিকিৎসক শহীদ হন।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন আমরা দেখেছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবির, লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) ডা. রোবেদ আমীন, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুনুর রশিদ, লাইন ডিরেক্টর ডা. নাজমুল ইসলাম মুন্না, লাইন ডিরেক্টর ডা. সোহেল মাহমুদ, উপ-পরিচালক ডা. মোবারক হোসেন দিগন্ত, নিপসমের পরিচালক ডা. সামিউল ইসলাম সাদিসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য পরিচালক, লাইন ডিরেক্টর, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সরকারী হাসপাতালে আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমনকি বিভিন্ন হাসপাতালে ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করেছে। এমনকি নিহত ছাত্র-জনতার লাশের সংখ্যা গোপন করেছে এবং ছাত্র জনতার লাশগুলোকে সরকারকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু ড্যাবের চিকিৎসকরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আহত ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে। ফলশ্রুতিতে তারা বদলি, শারিরীক নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হয়।’

হারুন আর রশীদ আরও বলেন, ‘৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মতো চিকিৎসক সমাজ আমরা আশা করেছিলাম বৈষম্য বিরোধী যে আশা নিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে তার আলোকে বৈষম্যহীন নতুন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কারের শুরুতেই আমরা দেখলাম ফ্যাসিবাদী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী বিগত সরকারের সুবিধাভোগী লোকদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নিপসমের পরিচালক, আইপিএইচ'র পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। আমরা স্বাভাবিকভাবে বিস্মিত ও ক্ষুদ্ধ।’

এ সময় ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ড্যাবের চিকিৎসকসহ ভিন্নমত পোষণকারী সব চিকিৎসক কর্মকর্তারাই জুলুম, নির্যাতন, পদোন্নতি বঞ্চনা, বদলি হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অনেকের চাকরিচ্যুতি হয়েছে, নির্যাতনের কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তারপরেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ড্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ড্যাব এই আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন প্রদান করে এবং ড্যাবের চিকিৎসকরা বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ড্যাবের চিকিৎসকরা পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সারাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী দ্বারা হাজার হাজার যে ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা, জরুরী অপারেশন ও পরবর্তীতে পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে যা এখনো চলমান রয়েছে।’

ড্যাব মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকরা আশা করেছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানে পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের সহিত আলাপ-আলোচনা করে আওয়ামী সরকারের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যখাতকে পুনর্গঠন এবং দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের অপসারন এবং দুর্নীতি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। একই সঙ্গে সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী ও বঞ্চিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল, হাসপাতালের পরিচালক এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করে একটি আস্থাশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন। কিন্তু আমরা গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস হয়ে গেলেও তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। বরং শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণকারী, দুর্নীতিবাজ ও ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় বাধা প্রদানকারী স্বৈরাচারের দোসর চিকিৎসকদের পদায়ন করার মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।’