‘টাকা তুলতে না পারায়’ সরাতে চাইল মসজিদ কমিটি, মিম্বারে কাঁদলেন ইমাম (ভিডিও)
রাজধানীর রামপুরা বাজারে অবস্থিত ‘বায়তুল হুদা কেন্দ্রীয় মসজিদ’-এর ইমাম মো. ইজাজুল ইসলামকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা। আজ শুক্রবার জুমার নামাজে খুতবা দেওয়ার আগে মিম্বারে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইমাম নিজেই এ তথ্য জানান।
ইজাজুল ইসলাম জানান, আগে থেকে না জানিয়ে তাকে ইমামের পদ থেকে সরে যেতে বলেছেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা। আজই তার শেষ জুমার নামাজ। এ তথ্য জানিয়ে সব মুসল্লির কাছে ক্ষমা চান, কোনো ভুল হলে মাফ করে দিতে বলেন ইমাম।
ইমাম জানান, কেন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, সেই তথ্য জানতে মসজিদের মুতাওয়াল্লিকে (ব্যবস্থাপক বা পরিচালক) ফোন করলে তিনি ইমামকে বলেন, ‘মসজিদে কালেকশন হয় না, আপনি (ইমাম) কালেকশন করেন না। মসজিদে টাকা ওঠে না।’
মুসল্লিদের কাছে প্রশ্ন রেখে ইমাম বলেন, ‘মসজিদে টাকা না উঠলে কি ইমামের দোষ?’ তখন সব মুসল্লি জবাব দেন, ‘না’।
ইমামকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মসজিদ কমিটি, এ তথ্য জানার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুসল্লিরা। তারা মসজিদ কমিটিকে সরে যাওয়ার দাবি জানান। এ সময় মুসল্লিরা ওঠে দাঁড়ান। মসজিদের ভেতরে শুরু হয় হট্টগোল। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে এই হট্টগোল।
হট্টগোলের মধ্যেই মসজিদের সাউন্ডবক্স ও মাইকে মুসল্লিদের উদ্দেশে একজন জানান, নামাজ শেষে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে। সেই আশ্বাসের পরও মুসল্লিরা হট্টগোল করতে থাকেন। তারা ইমামকে পদে রেখে মসজিদ কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ করতে বলেন। একপর্যায়ে মুয়াজ্জিন খুতবার আগের আজান দিতে ধরেন। কিন্তু তবুও হট্টগোল চলতে থাকে। পরে তিনি আজান বন্ধ করে দেন। এভাবে আরও কয়েক মিনিট হট্টগোল চলার পর মুয়াজ্জিন আজান দেন। তখন ইমাম লাঠি হাতে মিম্বারে দাঁড়িয়ে আরবিতে খুতবা দেওয়া শুরু করেন। এ সময় ইমামকে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি কাঁদছিলেন আর খুতবা পড়ছিলেন।
খুতবার পর নামাজ পড়ান ইমাম। সালাম ফিরিয়ে মুসল্লিদের দিকে ঘুরে বসে মোনাজাত করবেন ইমাম, এমন সময় মুসল্লিরা আবার মসজিদ কমিটির পদত্যাগ চান। এ সময় একে একে মসজিদের মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে যান। তারা মসজিদ কমিটির সদস্যদের মুখ থেকে পদত্যাগের কথা জানতে চান। এ সময় মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ কথা বলেন। তিনি আশ্বাস দেন ইমাম থাকবেন। এভাবে আরও কিছুক্ষণ হট্টগোল চলে। শেষে মুসল্লিদের চাপে কমিটির সদস্যরা জানান, তারা সরে যাবেন, যদি যোগ্য কেউ থাকেন তারা যেন এসে দায়িত্ব নেন।
৬ বছরে চার ইমাম পরিবর্তন
জানা গেছে, বায়তুল হুদা কেন্দ্রীয় মসজিদের সঙ্গে মাদ্রাসাও রয়েছে। মসজিদের ইমাম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। সেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও আজ মসজিদে ইমামকে রাখার জন্য দাবি জানায়। ‘ইমাম ভালো মানুষ’, সেখানে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
মসজিদটির মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ছয় বছরে এই মসজিদের অন্তত চারজন ইমাম পরিবর্তন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুর রহিম, মোহাম্মদ আলী, নুরুল ইসলাম ও তাসফিন মাহমুদ। কয়েক ঘণ্টার নোটিশে ইমাম নুরুল ইসলাম ও তাসফিন মাহমুদকে সরিয়ে দিয়েছিল মসজিদ কমিটি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে প্রায় এক বছর আগে তাসফিন মাহমুদকে ইশার নামাজের পর রাত ১১টার দিকে বলে দেওয়া হয়, তিনি যেন সরে যান। আর মসজিদে নামাজ না পড়ান। পরের ফজরের নামাজও তাকে পড়াতে দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই মসজিদে ১৫ বছর ধরে নামাজ পড়া এক মুসল্লি বলেন, তাসফিন মাহমুদকে জামায়াত ট্যাগ দিয়ে ও মামলার হুমকি দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তার বিদায়ের কথা শুনে অনেক মুসল্লি কেঁদেছেন। পরে শুক্রবার নতুন ইমাম দেখে মুসল্লিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। মসজিদে হট্টগোলও হয়েছিল। কিন্তু কমিটির সদস্যরা পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি সামলিয়েছিলেন। এর কিছু দিন পর মো. ইজাজুল ইসলামকে ইমামের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুসল্লিরা তার কেরাত ও খুতবা শুনে সন্তুষ্ট।
এসব বিষয়ে জানতে রাতে মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সাঈদের মোবাইল ফোনে তিনবার ফোন করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।