গণধোলাইয়ে বিএনপিকর্মী নিহত

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:১৪
শেয়ার :
গণধোলাইয়ে বিএনপিকর্মী নিহত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসকিউ কারখানায় ডাকাতির অভিযোগে রফিক (৪২) নামের এক বিএনপিকর্মীকে গণধোলাই দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ জনকে গণধোলাই দিয়ে আটক করে রাখা হলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে।

আজ রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আহতদের উদ্ধার করে মস্তান নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুই জনকে মিরসরাই সেবা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রফিককে মস্তান নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আরও কয়েকজনের শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, রফিক বাহিনীর প্রধান রফিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অর্থনৈতিক অঞ্চলে চাঁদাবাজির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে বাহিনী গড়ে তুলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গতকাল শনিবার রাত ২টায় বেজার অধিগ্রহণ করা খাস জায়গায় একটি মাছের ঘের দখলের জন্য ১৫-২০ জন সিএনজি অটোরিকশায় এসে ঘের পাহারাদার আনোয়ার হোসেন (৩৪), মো. আনোয়ার (২৭) ও হাবিবকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে তারা আগুন দেয়। এ ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে মিরসরাই সেবা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে সেখান থেকে আনোয়ার হোসেনকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মাছের ঘেরটি বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নবী কোম্পানি, হক সাব, আরিফ ও মোস্তফা সওদাগরের দখলে ছিল। সরকার পতনের পর বিএনপির আনোয়ার হোসেন ও হাবিব যৌথভাবে দখল নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ‘আর্মি খান বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিল রফিক। সে সময় তাদের দ্বারা মাছ চুরি, গরু চুরি, চাঁদাবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আর্মি খান গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে মারা যান। পরবর্তীতে রফিক ওই বাহিনীর প্রধান হয়ে ওঠে এবং চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন। বিএনপি সরকার পতনের পর তিনি দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিভক্ত উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী গ্রুপে জায়গা করে নেন। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। গ্রুপ ভারি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অর্থনৈতিক অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। সমানে চাঁদাবাজি শুরু করে জলে-স্থলে। সাগরে জেলেরা মাছে শিকারে নামলেও তাকে চাঁদা না দিলে জাল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

শনিবার রাত ২টায় এসকিউ ইলেকট্রিক কোম্পানির কারখানায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে গেলে কারখানার স্টাফরা তাদের ঘিরে ফেলে গণপিটুনি দিয়ে রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকসহ তার অনুসারী ১৩ জনকে আটক করে রাখে।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল জোরারগঞ্জ থানা এরিয়াতে পড়েছে। তবুও আমাদের পুলিশ ঘটনাস্থলের গিয়েছে। তাদের সাথে সেনাবাহিনীর টিম রয়েছে। এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। তারা ফিরে আসলে বিস্তারিত জানাব।

জোরারগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক আশিক জানান, উপপরিদর্শক কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। ফিরে আসুক তারপর বিস্তারিত জানাব।

মাস্তাননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফাহিম জানান, আহতদের মধ্যে রফিক নামে একজন মারা গেছেন। মারামারির ঘটনায় আহত আরও কয়েকজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। গুরুতরদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শাহেরখালী ইউনিয়ন থেকে এসকিউ কারখানার সামনে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় স্টাফ কর্মচারীরা ডাকাত ডাকাত বলে হামলা চালায়। তাদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। বিস্তারিত আরও খবর নিয়ে পরে জানাব।

এ বিষয়ে জানতে এসকিউ ইলেকট্রিকের ব্যবস্থাপক মো. এহসানুল কবির নিজামীকে একধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।