‘আগস্ট তাদের শেষ রক্ষা করেনি’

বিনোদন প্রতিবেদক
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:০২
শেয়ার :
‘আগস্ট তাদের শেষ রক্ষা করেনি’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই মাঠে ও ফেসবুকে সরব ছিলেন জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের অগ্নিশিখা জ্বলে ওঠে গেল জুলাইয়ে। এরপর আগস্টে তা রূপ নেয় ভয়াবহ আকারে। এই সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রাজপথে নামেন দেশের জনগণ। আর এই পুরো সময়টা জুড়ে আশফাক নিপুনের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সকল অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছে। হুমকি–ধমকি দিয়েও দমানো যায়নি তাকে।

অবশেষে ছাত্র-জনতার বিজয়ী হাসিতে হেসেছেন তিনিও। সেই আগস্ট মাস শেষ হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ এই নির্মাতার। বরাবরের মতো এবারও মনের কথাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন তার ফেসবুকে।

দীর্ঘ এক পোস্টে আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘অনেকেই আগস্ট মাস শেষ হওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। আমার বরং খারাপই লাগল মাসটা শেষ হয়ে যাওয়ায়। আমার জন্মদিন এই মাসে শুধুমাত্র সেই কারণে না। আগস্টের প্রথম পাঁচ দিনেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। জুলাই ১৭ থেকে ছাত্র-জনতার ওপর হাসিনা সরকারের নারকীয় আক্রমণের যে ধারা অব্যাহত ছিল, তার যে করুণ পরিণতি হতে যাচ্ছে সেটা ২ আগস্ট প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনারের যে লক্ষ জনতার দ্রোহ যাত্রাতেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। সেই জনতার কাতারে আমিও ছিলাম। দেখেছিলাম মানুষের প্রতিবাদী, শেষ না দেখে ঘরে না ফেরার প্রত্যয়।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘শোনা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও নাকি বলাবলি করছেন আগস্ট মাস পার করতে পারলেই তারা বেঁচে যাবেন লম্বা সময়ের জন্য। আগস্ট তাদের সেই পার আর হতে দেয় নাই। হাসিনা সরকারের পতন ঘটল। প্রবল ক্ষমতাশালী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাসহ সবাই এখন পলাতক। আগস্ট তাদের শেষ রক্ষা করেনি।’

ভয়াবহ বন্যার কথা স্মরণ করে এই নির্মাতা লিখেছেন, ‘জালিম সরকারের পতনের পর আমরা যখন আনন্দের জোয়ারে ভাসছিলাম তখনই প্রকৃতি আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সরকার পতনের দুই সপ্তাহেই দেশে নেমে এল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। সাড়ে ৪ লাখ পরিবার, ৫৫ লাখ মানুষ আর লক্ষাধিক গবাদি পশু আক্রান্ত হল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুছিয়ে উঠারও সময় পাননি। কিন্তু আগস্টের স্পিরিট চেনালো নতুন বাংলাদেশকে। সারা বাংলাদেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ল বন্যার ত্রাণ কাজে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে শিশু, ভিক্ষুক পর্যন্ত যার যা আছে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এল বন্যাদুর্গতদের বাঁচাতে। এত বড় স্কেলের দৈব দুর্বিপাকে ভয় না পেয়ে আগস্ট মাস দেখল আরো অনেক অনেক বড় মানবতার বন্ধন। যে বন্ধন বুঝিয়ে দিয়েছিল বিপদে বাংলাদেশীর পরিচয়।’

সবশেষে মহানগর’খ্যাত নির্মাতা আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পুরো বাংলাদেশ যে প্রতিরোধের সংকল্প নিয়ে দুইবার রাস্তায় নেমে এসেছে, সেই কারণে আগস্ট ২০২৪ আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জুলাই যদি হয় রক্তাক্তের, আগস্ট ৪ তাহলে বিজয়ের, ভাতৃত্বের, সহমর্মিতার, মানবতার। আমরা ক্যালেন্ডারে জুলাই মাসকে আটকে দিয়েছিলাম। আগস্ট যেন আমাদের মুক্ত করে দিল। আগস্ট ২০২৪ তাই প্রতিবছর আমার কাছে আনন্দের, স্মরণীয় আর ভেঙে না পড়ার মাস হয়ে ফিরে ফিরে আসবে।’