ত্রাণ দিতে এসে শিক্ষার্থী অসুস্থ, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি
৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২৯
শেয়ার :
ত্রাণ দিতে এসে শিক্ষার্থী অসুস্থ, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ

বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ দিতে ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে এসে পানিতে ডুবে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, ২৭ আগস্ট ঢাকার উত্তরা ৩ নং সেক্টর এলাকা থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নোয়াখালীতে আসেন একদল শিক্ষার্থী। তারা নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে নোয়াখালীর সদর উপজেলার ২ নং দাদপুর ইউনিয়নের খলিফার হাটে ত্রাণ বিতরণের সময় পানিতে ডুবে কথা (২১), আরাবী (১৮) ও সালমান (২২) অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় অপর শিক্ষার্থীরা তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দেখে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠান। মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা তাদের দেখে ওষুধ ও স্যালাইন লিখে দেন। প্রথমে তাদের স্যালাইন সংকটের কথা বলে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়। পরে তারা ঢাকা থেকে ত্রাণ বিতরণ করতে এসেছে বলে জানালে ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স তাদের হাসপাতাল থেকেই স্যালাইন দেন। পরে অসুস্থ আরাবীর ওয়াশরুমে যাবার প্রয়োজন হলে হাতের ক্যানুলা খুলতে একাধিকবার নার্সকে ডাকেন। নার্স না আসায় পাশের এক রোগীর স্বজন তার হাতের ক্যানুলা খুলে দেন। কিন্তু ক্যানুলার মুখ বন্ধ করেননি। এতে তার হাত থেকে অনেক রক্ত ঝরে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনো নার্স না আসায় সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের তিনজনকেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভর্তি করেন। 

পরবর্তীতে স্থানীয় ছাত্রদের বিষয়টি জানানো হলে তারা সবাই সবাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং ক্যানুলা খুলে দেওয়া অন্য রোগীর স্বজনকে মারধর করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সেখানে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। 

পরে হাসপাতালের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাসিনা জাহান, সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিমসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম, রোগীদের হয়রানি, দালাল চক্রের দৌরাত্ম, সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখা, হাসপাতালের ওষুধ বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করা, হাসপাতাল কম্পাউন্ডে দোকান দিয়ে উন্মুক্তভকবে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করা, ডাক্তার ও নার্সদের আইডি কার্ড ও এপ্রোন না পরায় রোগীদের চিনতে সমস্যা হওয়া, ডাক্তার ও নার্সদের সঠিকভাবে ডিউটি না করা, রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্ররা। 

এ সময় উপ-তত্ত্বাবধায়ক সমস্যাগুলো স্বীকার করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এর সমাধান করার আশ্বাস দেন। 

নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার বলেন, ‘ত্রাণ দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার গাফিলতির খবর শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আশা করছি এর সঠিক সমাধান হবে।’

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। 

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি জানামাত্রই আমি সেখানে সিভিল সার্জনকে পাঠিয়েছি।’