সড়কের টোল আদায় করছে কারা?

তাওহীদুল ইসলাম
২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সড়কের টোল আদায় করছে কারা?

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর টোল আদায় নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বিভিন্ন সেতুতে স্থানীয়রা টোল আদায় শুরু করেছে। কিছু সেতুতে টোল ছাড়াই চলছে গাড়ি। এর মধ্যে ১৪টি সেতুতে টোল নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। এ অবস্থা চলছে গত ৫ আগস্ট থেকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সুযোগে স্থানীয় এক শ্রেণির লোকজন টোল আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে। ভাঙচুর করে ফেরিতে। এরপর তারা ইচ্ছামতো টোল ধার্য করে আদায় শুরু করে। এমন বাস্তবতায় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সওজ। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, সওজের মাধ্যমে সরাসরি চারটি সেতুর টোল আদায় করা হতো। আর ১১টি সেতুর টোল আদায় করত সওজের নিযুক্ত ইজারাদার। এখন এসব সেতুর টোল পাচ্ছে না সওজ। ফলে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সওজের রাজস্ব আদায়ের বড় উৎস সড়ক ও সেতু থেকে টোল আদায়। বলা যায়, ৯০ শতাংশ রাজস্ব আসে এ খাত থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৮৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সড়ক, সেতু ও ফেরি থেকে আদায়কৃত টাকার পরিমাণ ১১৭৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, কিছু সেতুতে টোল আদায় নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আশাকরি শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।

জানা গেছে, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ সেতুর ইজারাদার মেসার্স মোস্তফা কামাল। ৩০ জুন থেকে ইজারা শুরু প্রতিষ্ঠানটির। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ৩০ জুন। সেখানকার খুরশিদ মহল সেতুতে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টোল আদায়ে চুক্তিবদ্ধ ইজারাদার মেসার্স খুরশিদ মহল ব্রিকস। বানার সেতু ও রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া সেতুর টোল সওজ আদায় করে গত মাসের ১ তারিখ থেকে। চাঁদপুর সেতুতে মেসার্স এমআই ট্রেডিং একই তারিখ থেকে টোল আদায় শুরু করে। তাদের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু ও লামাকাজী সেতুতে একই তারিখ থেকে টোল আদায় করছিল সওজ। গত বছরের ১ জুলাই থেকে তৈলার দ্বীপ সেতু থেকে টোল তুলছে জেআর ট্রেডিং। মহানন্দা সেতুর অবস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জে। মো. হাম্মাদ আলী নামের ইজারাদার গত মাসের ১ তারিখ থেকে টোল আদায় করছিল। দুই ইজারাদারের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন। মেসার্স সরদার কনস্ট্রাকশন গত মাস থেকে টোল তুলছিল বাগেরহাটের দড়টানা সেতু থেকে। তাদের মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। খুলনার শিবসা সেতু থেকে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে টোল আদায় করে মেসার্স আলী আকবর এন্টারপ্রাইজ। তাদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জুন। একই সময়ে মেয়াদ শেষ হবে খুলনার কয়রা সেতুর ইজারাদারের। সেখানে আনার আলী নামের ইজারাদার ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে টোল তুলছে। মানিকখালী সেতুটির অবস্থান সাতক্ষীরায়। কুষ্টিয়ায় সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতুর অবস্থান কুষ্টিয়ায়। এ দুটি সেতুর টোল গত মাস থেকে আদায় শুরু করেছিল সওজ। বর্তমানে এই ১৪টি সেতুর টোল পাচ্ছে না সওজ। এ ছাড়া নড়াইলের শিকিরহাট ফেরি ঘাটে হামলা হয়েছে গত ২৭ আগস্ট। এরপর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ সেখানে। মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে টোল নিচ্ছে। ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ফেরি ঘাটের ইজারা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস গতকাল বলেছেন, সড়কের প্রত্যেক সেতুতে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী টোল দিতে হবে। রাষ্ট্রকাঠামো পরিচালনায় ক্ষমতার অপব্যবহার কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, দুটি জরুরি বিষয় নিয়ে আমাদের কথা বলার আছে। একটি হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সেতুতে ছাত্রদের কথা বলে টোল আদায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা হলো, এটি রাষ্ট্রের আয়ের উৎস। ফলে কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম অপব্যবহার করে এ কাজ করবেন না। প্রতিটি ব্রিজে টোল দিতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ত্রাণের ট্রাক গেলেও টোল দিতে হবে। কেন না, দেশকে স্থিতিশীল করতে হলে অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল করতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করার যে সংস্কৃতি ছিল এত বছর ধরে, এখন যদি সামান্য অস্থিতিশীল অবস্থা দেখে সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন কিংবা কোনো সেতুতে টোল দেওয়া বন্ধ করেন বা স্টিকার দেখিয়ে পার হয়ে যানÑ এটিকে আমরা সমর্থন করি না।