সুস্থভাবে বাঁচতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন আমান উল্লাহ আমান (২২)। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেধাবী ছেলেকে নিয়ে মা-বাবার রয়েছে অনেক স্বপ্ন।
আমান পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড তাফালবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রহমান ও নিলুফা ইয়াসমীন দম্পতির ছেলে। পিতা আবদুর রহমান একটি বেসরকারি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে অনেক আগেই অবসরে যান। মাতা নিলুফা ইয়াসমীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যা বেতন পান তাই দিয়ে চলে সংসার ও আমানের পড়ালেখার খরচ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ির কোনাপাড়ায় রোকেয়া আহসান ইউনিভার্সিটি কলেজের ইংরেজী বিষয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আমান শনির আখড়া গোয়াল বাড়ি মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশুনা করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই ঢাকার রাজপথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমান মোবাইল ফোন যোগে আমাদের সময়কে বলেন, গত ২০ জুলাই শনিবার সকাল পৌণে ১১ টার দিকে কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় দনিয়া কলেজের সামনে রাস্তায় মিছিল করার সময় হঠাৎ তলপেটে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তখন পা অবশ হয়ে রাস্তায় শুয়ে পরলে গুরুতর আহত অবস্থায় আন্দোলনকারী সহপাঠী বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শনির আখরা অনাবিল হাসপাতালে ও পরে একই এলাকার রয়েল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢামেক হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের প্রফেসর ডা. সালমা সুলতানা তার তলপেটে অপারেশন করে পিতলের একটি গুলি বের করেন।
চিকিৎসক বলছেন, তলপেটে ঢুকে গুলিটি পিছনের মাংশপেশীতে মেরুদন্ডের কাছে চলে গিয়ে তার পায়ের মাংশপেশীতে টান লেগেছে। তাই পায়ে তীব্র ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল তার। একা হাঁটা-চলা করা অসম্ভব হওয়ায় সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯ আগস্ট ঢামেক থেকে তাকে বিজিবি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ওই দিনই বিজিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাড়িতে করে নিয়ে যায় তাকে। আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও রান থেকে হাটু পর্যন্ত ব্যাথা রয়েছে এখনও।
আমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ কোনো টাকা খরচ হয়নি। এর আগে চিকিৎসার সকল ব্যয় অনেক কষ্ট করে আমার মা-বাবা বহন করেছেন।
জানা যায়, ২১ আগষ্ট সকাল ৯ টায় সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে বিজিবি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এ সময়ে তিনি আমানের মাথায় হাত বুলিয়ে সার্বিক খোঁজ নিয়েছেন।
আমান দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও দশমিনা সরকারি আবদুর রশিদ তালুকদার ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির কোনাপাড়ায় রোকেয়া আহসান ইউনিভার্সিটি কলেজে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হন।
আমাদের সময়কে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। স্বৈরাচার হটিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, এ স্বাধীনতা সবার রক্ষা করতে হবে। কোথাও যদি কোনো দুর্নীতি হয় তা সবাই মিলে প্রতিরোধ করতে হবে। নতুন যে সরকার এসেছে তাদেরকে সহয়োগিতা করতে হবে। দেশে সুশৃঙ্খলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে আগে যে পরিস্থিতি ছিল ওই রকম পরিস্থিতি যেনো আর না আসে। সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক দেশ গঠনই আমার প্রত্যাশা।
ছেলেকে নিয়ে চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ আমানের বাবা-মায়ের। বাবা আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমার ছেলে আগের মত স্বাভাবিক জীবন ফিরে কি পাবে! সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের স্বার্থে আমার ছেলে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিসাধীন। ওর পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য সকলের নিকট দোয়া চাই।