আদালত চত্বরে মানিকের ওপর জুতা-ডিম নিক্ষেপ

সিলেট ব্যুরো
২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৩২
শেয়ার :
আদালত চত্বরে মানিকের ওপর জুতা-ডিম নিক্ষেপ

ভারতে পালাতে গিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে আটক হন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। গতকাল শুক্রবার রাতে তাকে আটক করা হয়। এরপর আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর হাকিম-২ এর বিচারক আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। 

এ সময় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাকে ঘিরে বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কেউ কেউ সাবেক এই বিচারপতির দিকে ডিম, জুতা ইত্যাদি ছুড়ে মারেন। এরপর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। পরে ভারতে অনুপ্রবেশে সাহায্যকারীরা তাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে সীমান্ত থেকে বিজিবির হাতে আটক হন তিনি। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে কানাইঘাট থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানান বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুন নবী।

এদিকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরিহিত সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক শুয়ে আছেন জঙলা এলাকায় কলাপাতার ওপর। তার কোলের কাছে একটি টুপি। মুখে কয়েক দিনের না কাটা দাড়ি। পাশে রয়েছে ছোট কয়েকটি পোটলা।  

ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। তবে ওই ফালতু লোক দুইটারে আইনো না। আমি এই দেশে (ভারত) এত কষ্ট কইরা আইছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?

ধারণা করা হচ্ছে, এই ভিডিওটি ভারতে স্থানীয় লোকজনের করা। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে পেরেছিলেন। সেখানে তিনি লুটপাটের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিজিবির হাতে আটক হওয়ার পর।

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মানিকের গলায় একটি গামছা, যেটা ধরে রেখেছেন একজন বিজিবি সদস্য। বিজিবি সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন, আপনে ইন্ডিয়া পালাইতাছেন কেন, বলেন। উত্তরে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ভয়ে পালাইতেছি।

কার ভয়ে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশাসনের ভয়ে।

আওয়ামী লীগের সরকার পতনের কয়েক দিন আগে চ্যানেল আইয়ের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন সঞ্চালককে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সমালোচিত হন মানিক। সেই প্রসঙ্গ ধরে বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন ওই একটা মেয়েরে যে বলছিলেন ইয়ের বাচ্চা। মানিক তখন বলেন, ওইটা আমি ক্ষমাও চাইছি। এই যে দেখেন আমি বলি, আমি ইয়ের রোগী।

এরপর শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আটক করার সময় তার সঙ্গে কী কী ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, তার সঙ্গে ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট, টাকা আর কয়েকটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।

বিজিবি সদস্য তখন প্রশ্ন করেন, কালকে যে দুজন টাকা নিছে, ওদের কাছে কত টাকা ছিল? উত্তরে মানিক বলেন, ওরা নিছে ধরেন, ৬০-৭০ মতো নিছে। বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, ৬০-৭০ লাখ? উত্তরে মানিক বলেন, হ্যাঁ। ওই দুই ছোকরা নিছে। আমি ১৫ হাজার টাকা ওদের বলছিলাম। ওইটা আমি দিছি। কিন্তু পরে এই দুই ছেলে আমারে মাইরা ধইরা সব টাকা নিয়ে গেছে।

পাশে থাকা আরেকজন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্ন করেন, মাইরটা কুনজাগাত মারছে ভাইয়া? বর্ডারে আনিয়া মারছে? শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, না ভিতরে, ইন্ডিয়ার ভিতরে।

বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, আপনি তো বাংলাদেশে অনেকের বিরুদ্ধে অন্যায় করছেন, জুলুম করছেন, এইটা সঠিক? সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমি জুলুম করি নাই, আমি বিচারপতি হিসেবে যেগুলো রায় দেওয়ার আমি দিছি।

এর আগে, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সাবেক এই বিচারপতির বিরুদ্ধে নোয়াখালীর আদালতে মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।