তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
তিস্তায় পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও স্রোত থাকায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ। তবে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে।
গত ১২ ঘণ্টায় গোকুন্ডা ইউনিয়নে অন্তত ১০টি বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ এলাকায় বসবাসরত মানুষজন নিজেদের শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন। তবে তার জন্য সময় পাচ্ছেন না, মুহূর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। উজানের ঢল যে কোনো সময় লালমনিরহাটে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে- এমন শঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ বাড়লেও তিস্তায় বন্যার শঙ্কা নেই। তিস্তা পাড়ের মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
এদিকে, তিস্তায় পানি বাড়তে থাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। গত দুই দিনে তিস্তা নদীর ডান তীর লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ ইউনিয়নের হরিনচড়া, গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গেকুন্ডা গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া গত দুই দিনে ৩০০ বিঘা ফসলি জমি দশ থেকে পনেরটি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার।
একদিকে তিস্তা পাড়ে ভাঙন অন্য দিকে বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেললেও তা ভাঙন রোধে অপ্রতুল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চর গোকুন্ডা এলাকার ছকমল উদ্দিন বলেন, শুনতেছি ভারতের নাকি বাঁধ ভেঙে তিস্তা নদীতে বন্যা শুরু হবে। কয়েক দিন থেকে একটু একটু পানি বাড়ার দিকে আছে। এবার পানির অনেক স্রোত, এতে চর গোকুন্ডার অনেক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা বন্যা আর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী এলাকার ফারক হেসেন জানান, তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পরে হাজার হাজর পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। আমাদের ত্রাণ দরকার নেই, তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলে তিস্তা পাড়ের লোকজন স্থায়ীভাবে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রশিদ সরকার টোটন জানান, তিস্তা নদীতে তেমন বন্যা না হলেও অতিরিক্ত স্রোতের কারণে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চর গোকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল থেকে প্রায় ১০-১৫টি বাড়ি ভাঙনের কবলে পরেছে। চোখের সামনে গ্রামের একের পর এক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকলেও কিছুই করা যচ্ছে না।
লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, জেলার কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।