বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ এখনো নিরবচ্ছিন্ন হয়নি

রেলপথে যাত্রী পরিবহন চালু হয়নি ।। বন্যায় ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস বন্ধ

তাওহীদুল ইসলাম
২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ এখনো নিরবচ্ছিন্ন হয়নি

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথের যোগাযোগ বহু দিনের। কিন্তু বেশ কদিন ধরে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ রাখা যাত্রী পরিবহন এখনো নিরবচ্ছিন্ন হয়নি। তবে সড়কপথ আংশিক সচল রয়েছে। বিভিন্ন বাসে যাত্রী পরিবহন চলছে বাংলাদেশ-ভারত রুটে। যদিও আগরতলায় বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় গতকাল থেকে ঢাকা-আগরতলা সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। আর নৌপথে পর্যটকদের যাতায়াত অনিয়মিত। ওই পথে মূলত পণ্যপরিবহন করা হয়।

রেল সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ। এই রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেস, বন্ধন ও মিতালী এক্সপ্রেস তিনটি ট্রেন এখনো বন্ধ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও যাত্রী পরিবহনের অনুমতি পায়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে পণ্য পরিবহন ২০ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়ে রেল কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষের এখনো অনুমতি পাননি তারা। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে আমরা প্রস্তুত। যেহেতু দুই দেশের বিষয়। আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করি দ্রুত চালু হবে।

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা-কলকাতা রুটে শ্যামলী এনআর পরিবহন বিআরটিসির তত্ত্বাবধানে যাত্রী পরিবহন চলছে। ৪০ সিটের বাসে আগে গড়ে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। এখন তা ৩০ জনে এসেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকে যাতায়াত করতে চাইছেন না। তবে যাত্রী সংখ্যা আরও বাড়বে।

এদিকে গতকাল বুধবার আখাউড়া স্থলবন্দরের কাছাকাছি বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় আগরতলা-ঢাকা রুটে আপাতত বাস সার্ভিস বন্ধ। আর আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা সার্ভিস ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত চলমান। কিন্তু আগরতলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত বন্ধ। ঢাকা-শিলং-গৌহাটি পর্যন্ত বাস সার্ভিস থাকলেও কভিডের কারণে ২০১৯ সাল থেকে ওই পথে যাত্রীসেবা বন্ধ।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে জানান, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব রুটেই যাত্রী এবং পণ্যপরিবহনে সর্বোচ্চ সেবার চেষ্টা করছে বিআরটিসি।

অন্যদিকে নৌপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ স্বাক্ষরিত হয়। যার আওতায় দুই দেশের নৌপথ ব্যবহার করে প্রতি মাসে কয়েকশ পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ চলছে। ভারতের হেমনগর থেকে এসব নৌযান রায়মঙ্গল নৌসীমান্ত হয়ে সুন্দরবনের রায়মঙ্গল, কাঁচিকাটা, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাসিয়া, বাটুলা নদী দিয়ে খুলনার কয়রার আংটিহারা শুল্ক স্টেশনে পৌঁছায়। সেখানে কাগজপত্রের কাজ শেষে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া, বজবজা, আডুয়া শিবসা, শিবসা নদী হয়ে নলিয়ান-চালনা হয়ে মোংলায় যায়। চালনা থেকে রায়মঙ্গল পর্যন্ত প্রায় ১২২ কিলোমিটার পথ। এর মধ্যে ১০০ কিলোমিটারের মতো এলাকা সুন্দরবনের মধ্যে। এ পথ পাড়ি দিতে নৌযানগুলোর অন্তত ৮ ঘণ্টা সময় লাগে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দশকে দেশে সিমেন্টশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ভারত থেকে বেশি আমদানি করা হয় সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ। সিমেন্ট কারখানাগুলো নদীর তীরে হওয়ায় ফ্লাই অ্যাশ আনতে এই নৌপথ ব্যবহার করা হয়। নৌপথে পণ্য পরিবহন স্থলপথের চেয়ে সাশ্রয়ী হওয়ায় নৌযান চলাচল বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেশির ভাগ জাহাজ খালি যায়। ভারত থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, পাথর, স্টিল সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে ফেরে।

২০১৯ সালে সরকারি উদ্যোগে ঢাকা-কলকাতা নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালু হয়। কিন্তু লাভজনক না হওয়ায় একই বছরের মার্চে একবার ভ্রমণ শেষে সেটি গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে ওই পথ দিয়ে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু হয়। বেসরকারিভাবে বাংলাদেশের পর্যটকবাহী জাহাজ ‘এমভি রাজারহাট-সি’ ঢাকা থেকে কলকাতায় পর্যটক নিয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে কার্গোবাহী নৌযানের মধ্যে বেশির ভাগই ফ্লাই অ্যাশ বহন করেছে। গত ২, ৪, ৭, ৯, ১১, ১৪, ১৬, ১৮, ২৪, ২৫, ২৮ ও ৩০ জুলাই নারায়ণগঞ্জ, পানগঁও এবং খুলনা বন্দরে পণ্য এসেছে।