সেন্সর বাতিলের পক্ষে নির্মাতারা
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের চলচ্চিত্রে সেন্সর প্রথা নেই। রয়েছে সার্টিফিকেশন বোর্ড। আর এই সার্টিফিকেশন বোর্ডের বিষয়টি নিয়ে অনেকবারই আওয়াজ তুলেছেন আমাদের দেশের নির্মাতারা। প্রতিবারই তারা প্রচলিত সেন্সর প্রথা বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড করার দাবি তুলেছেন। তবে বর্তমানে দাবিটা বেশ জোরালোভাবেই করছেন তারা। বিস্তারিত লিখেছেন-
ফয়সাল আহমেদ
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দীর্ঘ দিন ধরে সেন্সর নীতিমালা নিয়ে কথা বলে আসছেন। ফের বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে ‘গাহি নো সেন্সরের গান’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন। যার শুরুতে বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি লেখেন, ‘আপনি কি চান বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সিনেমা হোক? মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার নিয়ে সিনেমা হোক? আপনি কি চান গুমের মতো নিষ্ঠুর এবং অমানবিক যে কাজটা হাসিনা-জিয়াউল-তারেক সিদ্দিকী মিলে করেছে, সেটা নিয়ে সিনেমা হোক? ব্রিগেডিয়ার আজমি বা ব্যারিস্টার আরমানের হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে সিনেমা হোক? আপনি কি চান আমাদের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ ফিল্ম করুক? কেউ তার সিনেমায় প্রশ্ন করুক, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণে আমাদের উপস্থিতি ছিল না কেন? অথবা চান উল্টা দিকে কেউ বিএনপির ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে সিনেমা করুক? তাহলে সেন্সর বোর্ড নামক অথর্ব জিনিসটা বাতিল করেন!’ বর্তমান সেন্সর নীতিমালা সরকারবান্ধব, তা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘এখন যে সেন্সর নীতিমালাটা আছে, এটা এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে যে দল ক্ষমতায় থাকবে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো সিনেমা যেন আটকে দেওয়া যায়। আমরা চাই, যে দলই সরকারে থাকুক ফিল্মমেকারদের গলা যেন কেউ চেপে ধরতে না পারে। তার বদলে একটা রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যেখানে বলে দেওয়া হবে কোনটা অ্যাডাল্টদের জন্য, কোনটা প্যারেন্টাল গাইডেন্স লাগবে ইত্যাদি।’ অবাধ স্বাধীনতার অপব্যবহার রোধ করার বিষয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, ‘এখন প্রশ্ন আসতে পারে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি একটা সিনেমা বানায়, যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চরিত্রকে রাজাকার দেখাল কোনো আওয়ামী অন্ধভক্ত ফিল্মমেকার, তখন? অথবা উল্টা দিকে আরেক অন্ধভক্ত একটা সিনেমা বানাল, যেখানে বঙ্গবন্ধু ডিজইনফরমেশন দ্বারা আক্রান্ত হলো? এইসব মোটা দাগের বিষয় ঠেকানোর স্পষ্ট বিধান রেখেও নিশ্চয়ই বিধিমালা করা যাবে, যেখানে ফিল্মমেকাররা
ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে পারবে। পাশাপাশি আমি জানি, ধর্মীয় কিছু সেনসিটিভ ব্যাপার সেইফগার্ড করার কথা বলবেন সরকারি কর্মকর্তারা। এটা নিয়ে তারা আগেও বলেছিলেন। আমার উত্তর সেখানেও কী বিধান রাখতে চান, স্পষ্ট ল্যাঙ্গুয়েজে রাখেন। ভেইগ টার্মে কিছু রাখা যাবে না, যেটার ব্যাখ্যা একশ রকম হতে পারে এবং এই সুযোগ নিয়ে সরকার কাউকে হয়রানি করতে পারে।’ সেন্সর বোর্ডে নতুন দিনের পরিচালকদের জায়গা দেওয়ার দাবি জানিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, ‘আমি বুঝতে পারছি চলচ্চিত্র সেন্সর নীতি সংশোধনের আগ পর্যন্ত আপাতত কাজ চালানোর জন্য সেন্সর বোর্ডটা তো পুনর্গঠন করতে হবে। করেন সেটা। কিন্তু দয়া করে প্রাগৈতিহাসিক এফডিসির ততোধিক প্রাগৈতিহাসিক পরিচালক বা প্রযোজকদের এই কমিটিতে ঢোকানোর যে আজব অভ্যাস আছে, সেটা থেকে বের হয়ে আসেন। বাংলাদেশের নতুন দিনের ফিল্মমেকাররা প্রত্যেকেই এদের ঈর্ষার শিকার। কমিটিতে সেনসিবল লোকজন নেন প্লিজ। অনুদান কমিটিও একই রকমভাবে দলীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনের হাত থেকে উদ্ধার করেন।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
রেদওয়ান রনি
দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে সেন্সর প্রথা আর নেই। বহু আগেই এটাকে সংস্কার করে সার্টিফিকেশন বোর্ড করা হয়েছে। সেন্সর প্রথার মাধ্যমে সিনেমাকে আটকে রেখে সিনেমাকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে তো পারছেই না, উল্টো পিছিয়ে দিচ্ছে। বৈশ্বিক আদর্শ মেনে সার্টিফিকেশন হতে পারে। এটি নির্ধারণ করবে, কোন কনটেন্ট কোন বয়সের মানুষ দেখবে। এটা পুরো দুনিয়ায় অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে দেশেও সার্টিফিকেশন বোর্ডের আলাপ শুরু হয়েছিল। এর খসড়া নীতিমালা পড়েছি, সেটাও অনেক ত্রুটিতে ভরা। সার্টিফিকেশন বোর্ডের খসড়া বাতিল করে অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে নতুন করে কথা বলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হবে।
আশফাক নিপুন
পৃথিবীর কোথাও সেন্সর বোর্ড নেই। সেন্সর বোর্ড ঠিক করে দিতে পারে না, দর্শকেরা কী দেখবে আর কী দেখবে না। বিভিন্ন দেশে সার্টিফিকেশন বোর্ড আছে। সার্টিফেকশন বোর্ড থেকে সিনেমার গ্রেডিং দিয়ে দেওয়া হয়, আমাদের এখানেও সেই চর্চাই হওয়া উচিত। সার্টিফিকেশন বোর্ড ঠিক করবে, কোন সিনেমা কোন বয়সের উপযুক্ত। সেন্সর প্রথা বাতিল করতে হবে। সেন্সর বোর্ডের ন্যারেটিভের মধ্যে শিল্পীর চিন্তাকে বন্দি রাখার চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ বলেন, সেন্সর বোর্ড না থাকলে অশ্লীলতা চরম আকার ধারণ করবে। কাটপিসের যুগেও কিন্তু সেন্সর বোর্ড ছিল। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার ওটিটির শুরুর দিকে কেউ কেউ
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
বলেছিলেন, ওটিটিতে অশ্লীলতা প্রচার করা হচ্ছে; ওটিটি বন্ধ করা হোক কিংবা নীতিমালা করা হোক। পরে কিন্তু কোনো নীতিমালা ছাড়া, সেন্সরশিপ ছাড়াই ‘মহানগর’, ‘কারাগার’, ‘কাইজার’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’-এর মতো কাজ এসেছে। এগুলো দর্শকরা গ্রহণ করেছে। দর্শকরা ‘মহানগর ৩’-ও চাইছে। এগুলো কোনো নীতিমালা কিংবা সেন্সর বোর্ড দিয়ে আটকানো হয়নি। যেটা গ্রহণ করার, সেটা দর্শক গ্রহণ করবেই।
রায়হান রাফী
সারা পৃথিবীতে গ্রেডিং সিস্টেমে সেন্সর হয়। অনেকে বলে, আপনার সিনেমায় মারামারি, খুনোখুনি আছে। বাচ্চাদের দেখানো যাবে কি না? এটা আসলে সেন্সর বোর্ডই বলে দেবে, সারা পৃথিবীতে গ্রেডিং করা হয়। এটা ১৮ বছরের বেশিদের জন্য, এটা ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য। গ্রেডিং সিস্টেম চালু হোক। যেসব সিনেমা দেশ ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করে, সেগুলোর বিষয় আলাদা। একটু স্পর্শকাতর বিষয়, সত্য গল্প, যেটার সঙ্গে বাস্তবের মিল আছে, সেই সিনেমা আটকে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে পরিচালকদের গলা চেপে ধরে বোঝানো হয়, যা ইচ্ছা ভাবতে পারবেন না। এটা বন্ধ করা উচিত। যাদের সিনেমা সেন্সর বোর্ডে আটকানো আছে, অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। দর্শকদের সেগুলো দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক। পরিচালক হিসেবে একটি গল্প দর্শককে বলারঅধিকার আছে।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা