বাংলাদেশে সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (বর্তমানে পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
মুঠোফোনে নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের গুলিতে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় নিহত এসব মানুষের বেশির ভাগই তরুণ ও শিক্ষার্থী।’
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ১৫ আগস্ট নর্থইস্ট নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের উপর প্রথম মনোনিবেশ করেছে, যারা ভারত এবং অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’
শীর্ষ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ের নেতাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে তারা বিশেষত তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আলী আরাফাত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে খুঁজে বের করতে বেশি আগ্রহী। একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে ধারণা করা হয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে সেনাবাহিনী আটক করেছে। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি কোথাও লুকিয়ে আছে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলের অর্ধেক নেতাকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি পালিয়ে যান। সাখাওয়াত হোসেন বলেনন, ‘‘একজন ‘মেগালোম্যানিয়াক’ হিসাবে হাসিনা একটি অত্যাচারী রাজত্বের সভাপতিত্ব করে গেছেন এবং মানুষের জীবন নিয়ে তিনি বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। তার মন্ত্রিপরিষদের কিছু মন্ত্রী যেমন আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), আনিসুল হক (আইন) এবং ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) এবং বেশ কিছু সিনিয়র পুলিশ অফিসার এই হত্যা যন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।”
কামাল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২,০০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন এই তথ্য প্রকাশ করে স্বরাস্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ‘তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আওয়ামী লীগ দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশের বুকে ঘটে যাওয়া খুন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনার ব্যাপক তদন্ত শুরু হবে ১৪ আগস্ট থেকে। এই তদন্তগুলো হবে ১৯৪৫-পরবর্তী জার্মানির নুরেমবার্গ ট্রায়ালের আদলে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সে কথা উল্লেখ করে হোসেন বলেন, ‘তাদের শান্ত করতে আমার পাঁচ ঘণ্টা একটানা আলোচনা চালাতে হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম হাসিনার শাসনামলে কাদের হত্যা করা হয়েছে এবং কার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড চলেছে। অফিসারদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা আজ অনুশোচনায় ভুগছেন এবং আমার পা ছুঁয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ঠিক করবে পুলিশ বাহিনীকে কীভাবে পরিচালনা করা হবে। উপদেষ্টা হোসেনের মতে ‘কাজটি কঠিন হবে। বেশ কিছু অফিসারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায় লিপ্ত এবং বদলি-পোস্টিং র্যাকেট চালিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করত। তদন্ত শেষ হলে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারী এবং শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত’। একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের কাছে তার বার্তা হলো- আপনি কি ঢাকায় বন্ধুত্বপূর্ণ না শত্রু সরকার চান? কারণ যে দেশ পরাশক্তি হতে চায়, তাকে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমরা কেউ টুকরে টুকরে গ্যাং নই’।