গৃহিণী হয়েও যত সম্পত্তির মালিক আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামান পুরোদস্তুর গৃহিণী। তার নিজস্ব কোনো আয়ের সংস্থান নেই। তবে সম্পদে পিছিয়ে নেই। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক দামি ফ্ল্যাট, প্লট, ৫০ কোটি টাকা দামের আলিশান বাড়ি এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জে ও নারায়ণগঞ্জে কোটি-কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার নামে।
স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা বিশিষ্ট আলিশান বিশাল বাড়ি, যার বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি।
এছাড়া ধানমন্ডি-১২/এ-তে ইস্কাটনে আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ফ্ল্যাট রয়েছে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা প্লট, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্লট রয়েছে তার।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় আফরোজা জামানের নামে ৪১ শতাংশ জমি রয়েছে। একই মৌজায় তার নামে রয়েছে আরও ২৬ শতাংশ জমি। একই মৌজায় তার নামে ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেনা হয় আরও ৩৯ শতাংশ জমি। এছাড়া জোয়ার সাহারা মৌজায় ৫ কাঠা জমি, একই মৌজায় আরও ১০ কাঠা জমি, একই মৌজায় আরও ৩৯ শতক জমি রয়েছে তার। এছাড়া আফরোজা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইর-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ২৮ একর, একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমির মালিক।
ঢাকার বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আফরোজা জামানের যে বিপুল পরিমাণ জমি কেবল সেগুলির বর্তমান বাজারমূল্যই শত-শত কোটি টাকা। অথচ, তার মতো একজন গৃহিণীর পক্ষে এত জমি কেনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এছাড়া শেপিয়ার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান আফরোজা জামান। অথচ তিনি একজন আগাগোড়া গৃহবধূ, যার কোনো নিজস্ব পেশা ছিল না। এই কোম্পানির পরিচালক আছাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত।
মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে রাজধানীর ৫৬/৫৭, সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় ৩ নম্বর বিল্ডিংয়ে ৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট আছে। এছাড়া তার নামে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্লট আছে। ২০২১ সালে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা সাদাও করেছেন তিনি, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর।
ছোট ছেলে আসিফ মাহাদিনের নামে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ৮/এ রোডের ৬ নম্বর ট্রিপ্লেক্স বৈশিষ্ট্যের বাড়িটি তার নামে। এটির বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া আফতাবনগরেও তার নামে ৫ কাঠা প্লট আছে।
এছাড়া আছাদুজ্জামান মিয়া গাজীপুরের শ্রীপুরে দেড় একর জমির মালিক। ভাগ্নে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম ও শ্যালক নূর আলম ওরফে মিলনের নামে কেনা হলেও তারা কার্যত বেকার অর্থাৎ তাদের কোনো আয় নেই।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামানের শ্যালক-শ্যালিকার নামেও সম্পত্তির ছড়াছড়ি। তাদের নামেও কোটি কোটি টাকার জমি রয়েছে। শ্যালিকা ফাতেমাতুজ্জোহরার নামে ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, খুলনায় বাড়ি এবং মোহাম্মদপুরে একাধিক জমি রয়েছে। পরিবহন ব্যবসাও রয়েছে তার।
আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর সৎ ভাই হারিচুর রহমান সোহানের নামেও পরিবহন ব্যবসা আছে। এছাড়া তিনি নিজেকে পিওর গোল্ড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়েছেন। শ্যালকের এসব ব্যবসায় আছাদুজ্জামানই বিনিয়োগকারী বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
সোহানের নামে রাজধানীর অভিজাত বেইলি রোড, শাহজাহানপুরে ফ্ল্যাট রয়েছে। বনশ্রী ও আফতাবনগরে একাধিক প্লট রয়েছে। এর মধ্যে বনশ্রীর একটি প্লটে বাড়ির নির্মাণকাজও চলছে। আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ টাকা দিয়ে এসব সম্পদ গড়া হয়েছে।
এছাড়া চলতি বছরের ১৫ মে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় তারা মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর ছেলের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে সোহানের নামে। ৩ কোটি টাকা দিয়ে ওই জমি মূলত আছাদুজ্জামানই কিনেছেন শ্যালক সোহানের নামে।
তবে আছাদুজ্জামানের বাবার সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। তবে গ্রামে সামান্য কিছু জমিজমা ছিল। সেসব দিয়ে তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো। অর্থাৎ, বিপুল পরিমাণ জমিজমার মালিক বা অর্থ-বিত্তশালী অবস্থা তাদের ছিল না।
আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ডিএমপি ছেড়ে গেলেও সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান এখনো সেখানকার স্টিকারযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করেন। গেল সংসদ নির্বাচনে তিনি তার পূর্বের পেশাগত পরিচয় খাটিয়ে প্রভাব বিস্তার করেন, যা সেসময় গণমাধ্যমে খবর হয়।