অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেসব প্রস্তাবনা দিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনতিবিলম্বে করণীয় ছয়টি ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয় ১৩টি প্রাক-প্রস্তাবনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কী চাই?’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংগঠনটি বিভিন্ন অংশীজনের প্রস্তাব ও প্রশ্নও গ্রহণ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া অবিলম্বে করণীয় ছয়টি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা; বিভিন্ন উপাসনালয় ও স্থাপনায় হামলা ঠেকান এবং বিচার করা; জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ জনগণের ওপর জুলুমের জন্য দায়ীদের জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তদন্ত ও বিচার শুরু করা; কোটা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং নিহতের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করা; সাম্প্রতিক সময়ের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং আটকদের মুক্তি দেওয়া এবং শিল্প-কলকারখানা খুলে দিয়ে সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
দীর্ঘমেয়াদে সরকারের করণীয় প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে-
১) সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়, জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত শহিদদের তালিকা, স্মৃতিস্তম্ভসহ নানা বিষয় নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার চালু করা।
২) গণমাধ্যমকে সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত করা এবং ডিজিটাল বা সাইবার সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া।
৩) পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করা এবং কৃষিখাতের বাজার ব্যবস্থাপনা পুনরুদ্ধার করা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
৪) আমলাতন্ত্র সংশোধন করে জনবান্ধব প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করা এবং জুলাই হত্যাকাণ্ড তদন্তে নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল গঠন নিশ্চিত করা।
৫) প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং দলীয় রাজনীতি মুক্ত করা। দেশি-বিদেশি গোপন চুক্তি জনগণের সামনে আনা।
৬) বিদ্যমান শিক্ষাক্রম বাতিল করা এবং শিক্ষানীতি নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা।
৭) সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠন করা।
৮) প্রবাসীদের জীবনমানকে মূল্য দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
৯) পাহাড়িদের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া এবং সব অসম প্রকল্প পুনর্মূলায়ন করা।
১০) জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশের শিল্পের বিকাশ নির্ধারণ করা।
১১) ব্যাংক থেকে দুর্বৃত্ত চক্র ও নিয়ম ভঙ্গ করে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের আইনের আওয়ায় আনা।
১২) সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জনবৈচিত্রের সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা।
১৩) সবার জন্য জাতীয় নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সরকারের কাছে আমাদের মূল দাবি একটাই। সরকারের ঘাড়টা জনগণের দিকে ফেরাতে হবে। তাহলে সব দাবি পালিত হবে। সংবিধানে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, এর অধীনে যে কেউ স্বৈরতন্ত্র হয়ে উঠবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা নির্ধারিত হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাইয়ের যে গণহত্যা এবং নৃশংসতা তার বিচারের জন্য সরকারকে আবেদন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান।