শান্তির বাংলাদেশ চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
শান্তির বাংলাদেশ চাই

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে

আবুল হায়াত

শত শত প্রাণের বিনিময়ে ২০২৪-এ আবার যে স্বাধীনতা পেলাম, এটা যেন নষ্ট না হয়। আমরা আর কোনো নৃশংসতা চাই না। দীর্ঘদিনের অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, স্বৈরতন্ত্রÑ এসব বিষয়ে মানুষ একেবারে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে সবাই মিলে প্রতিহত করে একটা বিজয় অর্জন করেছে।

এখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবিÑ অপশাসন, দুঃশাসন দূর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাহী বিভাগসহ সবকিছু রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার বিকল্প নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল বিগত সরকারের আমলে, তা ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনাই মূল চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত। সর্বোপরি একটা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে।

অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই

মামুনুর রশীদ

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের জন্য যে সহনশীলতা প্রয়োজন, তা সবাইকে দেখাতে হবে। আমরা অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই। কোনো মারামারি কিংবা হানাহানি দেখতে চাই না। এটা মাথায় রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ শুরু করা উচিত। টানা এক মাসের আন্দোলনে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেটা পুষিয়ে আনতে হলে দ্রুত এই মাধ্যমে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে করে আমরা নির্বিঘ্নে কাজে ফিরতে পারি। সৃজনশীলতার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি আসলে ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের কিছু বাধাও থাকে। এগুলো উঠিয়ে দিতে হবে।

সবাই মিলেমিশে শান্তিতে থাকব

প্রিন্স মাহমুদ

নতুন বাংলাদেশ গড়ার পেছনে গীতিকবি প্রিন্স মাহমুদ শুরু থেকেই সরব ছিলেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সশরীরে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। অবশেষে শিক্ষার্থীদের বিজয় হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভাস্কর্য থাকবে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা থাকবে। মাজার থাকবে, বাউল-ফকিরসহ সমস্ত সংস্কৃতি থাকবে। বাংলাদেশ সব ধর্মের, সব জাতির, সব মানুষের। এখানে সবাই মিলেমিশে, শান্তিতে থাকব।’ এর আগে তিনি বলেছিলেন, এ ‘এককভাবে আর কোনো স্বৈরাচারকে কোনোদিন আসতে দেব না। কোনো হত্যাকারী কোনো অমানুষের জায়গা বাংলাদেশে হবে না।’

নতুন বাংলাদেশে আর বিভক্তি চাই না

আসিফ আকবর

প্রতিবাদী আসিফ আকবর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে, ছাত্রদের পাশে ছিলেন। ছাত্রদের একদফা দাবির দিন মিছিল নিয়ে যোগ দেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অভিন্দন জানিয়েছেন বাংলা সংগীতের যুবরাজ। নতুন সরকারের কাছে নিজের প্রত্যাশার কথা তিনি জানালেন এভাবে, ‘তারুণ্যের বিজয় সুসংহত হোক। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখতে হবে। নতুন বাংলাদেশে আর বিভক্তি চাই না। যারা সংখ্যালঘু উপাসনালয়ে হামলা করছে, তাদের চিনে রাখুন। আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই। ১৯৭১ সালের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের শহীদ ছাত্র-ছাত্রীরা এই সাম্প্রদায়িকতার নামে নৈরাজ্যের জন্য যুদ্ধ করেননি। সাধু সাবধান। ভালোবাসা অবিরাম।’

বিপ্লবের সুফল পেতে একটু ধৈর্য্য ধরুন

লতিফুল ইসলাম শিবলী

আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছি, তবে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এখন দেশ গঠনের পালা। কিছু লোককে দেখবেন হতাশা ছড়াচ্ছে। তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, এ অবস্থার চেয়ে আওয়ামী লীগই ভালো ছিল। অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটা বিপ্লব ঘটিয়েছি, এ বিপ্লবের সুফল পেতে একটু ধৈর্য ধরুন। এ দেশের এক দল শিল্পী নিয়মিত ভারতীয় এম্বাসিতে আসা-যাওয়া করত। তারা মূলত ভারতীয় কালচারাল এজেন্ট, যারা এখানে ‘র’-এর হয়ে কাজ করত। নিজ দেশের বিরুদ্ধে যারা অন্য দেশের স্বার্থ রক্ষার কাজ করত, তারা ভয়ংকর ক্রিমিনাল। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা সবাই সতর্ক থাকবেন, চোখ-কান খোলা রাখবেন। স্বৈরাচার আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা যাতে আমাদের দেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার মতো না বানাতে পারে। আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়নি, শুধু এক অধ্যায় থেকে আমরা আরেক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। এখন আসল যুদ্ধ। দেশ গঠনের যুদ্ধ। প্লিজ সবাই ধৈর্য ধরুন এবং নতুন সরকারকে সাহায্য করুন।

পুলিশের ওপর আস্থা ফেরাতে হবে

সিয়াম আহমেদ

জনগণের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- এ মুহূর্তে এটাই সবার প্রত্যাশা। তাই পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে হবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই। সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন থানায় আক্রমণ হয়, অনেক পুলিশ সদস্যের প্রাণহানি ঘটে। এতে বাহিনীর সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই। রাতে টহল পুলিশ নেই। গত দু-তিন দিন ধরে নগরীর কিছু কিছু এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক চলছে। অন্য সময়ে থানা পুলিশের সহযোগিতা চাইতে পারত মানুষ। আমি মনে করি, খুব তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের কাজে ফিরে আসবে এবং যার যেটা দায়িত্ব, সেটা পালনে মনোযোগী হবেÑ এটাই প্রত্যাশিত। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো অত্যন্ত জরুরি।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই

আজমেরী হক বাঁধন

তরুণ প্রজন্মকে কখনো দমিয়ে রাখা যাবে না। দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াবেই। এটা আবার প্রমাণ হলো। সবার এখন উচিত ছাত্র-জনতার দেখানো পথ ধরে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া। যেখানে সবাই আইন মানবে, একে অপরের পাশে দাঁড়াবে, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার চাওয়াÑ মেধাবভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তব উপযোগী করুন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক ব্যবহার থেকে মুক্ত রাখুন, মানুষের কথা বলার অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব দিন। সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। গুম-হত্যার রাজনীতি বন্ধে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিতে হবে

জাকিয়া বারী মম

ছাত্ররা করে দেখিয়েছেন- কীভাবে দেশ সংস্কার করতে হয়, কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এখন বাকি কাজটুকু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। আমি মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টার প্রধান কাজই হবে জনমনে শান্তি ফিরিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক জায়গায় ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। বিগত সরকারের আমলে যত অন্যায়, অবিচার, হত্যা ও গুমের মতো ঘটনা ঘটেছেÑ সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া সবাইকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিতে হবে, সেই সঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে ভোটের অধিকার। তবে আমার আফসোস হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শিল্পী-সাহিত্যিক কেউ নেই। এটা কি পূর্ব কর্মের দায়! নাকি শিরদাঁড়ায় ক্ষয় ধরেছে তাই! লজ্জা!

ছাত্রসমাজ অল্পতে দমে যাওয়ার নয়

আশফাক নিপুন

এরশাদ পতনের গল্প শুনেছি। ৯ বছরের স্বৈরশাসন ছিল সেটা। কিন্তু নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের চেয়েও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাহাত্ম্য অন্য জায়গায়। স্বৈরশাসক এরশাদকে হটানোর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলÑ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এবার তাদেরই একজন স্বৈরশাসকের ভূমিকায়। স্বৈরশাসনের মেয়াদও ১৫ বছর। বিএনপির রাজনীতি সরকারের চাপে একেবারেই কোণঠাসা। মানুষের ভেতর ক্ষোভ চরমে। কিন্তু উদ্গিরণের রাস্তা কই? আজীবন নেতানির্ভর রাজনীতির মুখাপেক্ষী জনগণ নেতার সন্ধান পাচ্ছে না, যে তাদের এই অন্ধকার থেকে মুক্তি দেবে। বয়স ও অভিজ্ঞতার ভারে ন্যুব্জ প্রৌঢ়রা বলে যাচ্ছেন মেনে নাও। আওয়ামী সরকারের বিকল্প দেখানো বা মন্দের ভালো মতবাদ তখন তুঙ্গে। কিন্তু এ সময়ের ছাত্রসমাজ অল্পতে দমে যাওয়ার নয়। তাদের উল্টাপাল্টা বুঝ দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। তারা দেশের অতন্দ্র প্রহরী। দেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ তারা রুখে দেবে। ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের মাথায় রাখতে হবে, একটা অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী, মানবিক রাষ্ট্র গড়ার কারিগররা বাইরে দাঁড়িয়ে কিন্তু পাহারা দিচ্ছে।