গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সরকারের যাত্রাও শুরু হয়ে গেছে। দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, নির্দলীয় এ সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক অনেক প্রত্যাশা। এ সরকারের কর্মকা-ে সাধারণ মানুষ তাদের বহুল প্রতীক্ষিত আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন দেখতে চায়। তাই দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। নিশ্চিত করতে হবে সব ক্ষেত্রে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রভৃতি। এ ছাড়া দেশের সার্বিক অর্থনীতির চাকা সচলের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো, নিত্যপণ্যের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। তদুপরি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এসব সমস্যা দূর করে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারÑ এমনটাই প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, প্রচ- রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির পর সংকটকালীন একটা সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। এই সরকারের উচিত হবে দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে বিরোধী মত এবং সংখ্যালঘুরা যেন তাদের সমান অধিকার পায়, সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। তারা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেছেন। এর কিছু কিছুর সঙ্গে আমিও একমত। তবে দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল বিজয়ী। তিনি অনেক অভিজ্ঞ। উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেক অভিজ্ঞ লোক রয়েছেন। ফলে মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, আমার বিশ^াস অন্তর্বতীকালীন সরকার সঠিক পথেই আগাবে। তারা ভালো করবেন। তবে তাদের পলিসিগুলো (নীতি) আমাদের দেখতে হবে। এই সরকারকে সময় দিতে হবে। সরকার গঠনের আগেই বিএনপি তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। বিএনপিতো নিজেও নির্বাচনের জন্য সংগঠিত না। এই সরকারকে ভালো কিছু করতে হলে সব কিছু সংস্কার করেই নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও গণতান্ত্রিক চর্চা দরকার। কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে। আমার মতে, সময় পেলে তারা ভালো কিছু করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
প্রায় একই সুরে কথা বললেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে আকাশ সমান চ্যালেঞ্জ। জনগণের আকাক্সক্ষা, রাষ্ট্র মেরামতের আকাক্সক্ষা। এজন্য তাদের সময় দিতে হবে। রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলাতে হবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে আর যেন স্বৈরাচারী সরকারের উৎপত্তি না ঘটে। অন্যায়-অবিচার, লুটপাট, দুর্নীতি আর যেন না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রকাঠামো বদলানো দরকার। এটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ। কাজটা সহজ না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা লাগবে। দ্রুত নির্বাচনের দাবি তোলা হচ্ছে; এই সরকারের জন্য এটা একটা ভয়ানক চাপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করা। তা ছাড়া অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে, সেগুলোও মেরামত করতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের ধারাবাহিকতায় আপামর জনগণের গগনচুম্বী প্রত্যাশা পূরণের গুরুত্বদায়িত্ব নিয়ে ‘নবীন-প্রবীণের’ সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের কাছে প্রত্যাশাÑ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তাসহ একটি সুশাসিত ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্রকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে সুনির্দিষ্ট কৌশলনির্ভর পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও নির্দশন রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।