মাসুদের চিকিৎসার জন্য ঘাতকদের পা ধরেও রক্ষা হয়নি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে আহত হন ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সরোয়ার জাহান মাসুদ (২২)। আহত মাসুদকে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে বাধা দিলে ঘাতকদের পা ধরেন তার ভাই। কিন্তু তারা তাকে হাসপাতালে না পাঠাতে দিয়ে আবারও মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
গত রবিবার ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে গুলি চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। নিহত মাসুদ দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের মীর বাড়ির প্রবাসী মো. শাহাজাহান টিপুর বড় ছেলে।
গত মঙ্গলবার নিহত মাসুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বাবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে শুধু বুক চাপরাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘দেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। একটি স্বাধীন জাতির নিরাপত্তহীন জীবন কাম্য নয়। আমার মাসুদকে আল্লাহ শহীদি মর্যাদা দিয়ে জান্নাত দিন। ছেলেতো পাব না। আমার ছেলেসহ হাজার হাজার ছেলের রক্তের বিনিময়ে যেন শান্তি আসে এই আশা করছি।‘
মাসুদের মা বিবি কুলসুমের কান্নাতো থামছেই না। মাসুদের মা বিবি কুলসুমের আহাজারিতে স্বজনসহ প্রতিবেশীরা চোখের জল ফেলছে। বড় ছেলের ছবি মোবাইলে দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
নিহত মাসুদের মেজো ভাই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আল সামির বলেন, ‘ঘটনার দিন আমিও মিছিলে ছিলাম। আমার ভাই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেই দেশরক্ষার মিছিলে শামিল হয়। আমরা কাছাকাছি থাকলেও হামলার সময় আলাদা হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে কল দিয়ে জানায় আমার ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে আছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নেওয়ার পথে বেকের বাজার সরকার দলীয় ক্যাডারেরা আমাদের আটকে রেখে আবার পিটুনি দেয়। ভাইকে চিকিৎসা নিয়ে নিজ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাঁচাতে আমাকে লাথি কিলঘুষি দিলে আমি তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেছি। কিছুক্ষণ পর একজন এসে নিয়ে যেতে বলে। তারা আমাদেরকে মারধর করে। এমন নিষ্ঠুরতা, পাষবিকতা, বর্বরতা ও নির্মমতা মানুষ করতে পারে ভাবতে এখনও গা শিউরে উঠে।’
মাসুদের সহপাঠী সায়েদ হোসেন বলেন, ‘মাসুদকে আমরা হাসপাতালে আনার সময় দাগনভূঞার বেকেরবাজারে পথরোধ করে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সেখানে ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার আমাদের সিএনজি যেতে দিচ্ছিল না। আমাকেসহ অন্যদের এলোপাতাড়ি মারপিট করে তারা। পরে কোনরকম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।’
মাসুদের প্রবাসী বাবা মো. শাহাজাহান বলেন, ‘দেশরক্ষা করতে গিয়ে আমার নিরস্ত্র ছেলেকে ঘাতকেরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। ফেনীর জনপদে ছাত্রদের উপর গুলি করা হয়েছে। আমি চাই আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি যেন আর না আসে।’