‘আপনারা বের হয়ে যান, না হলে বিপদ হবে’

বিনোদন প্রতিবেদক
০৮ আগস্ট ২০২৪, ১৩:২৩
শেয়ার :
‘আপনারা বের হয়ে যান, না হলে বিপদ হবে’

কোটা সংস্কার আন্দোলন, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সরকার পতনের এক দফার গণআন্দোলনে নেমেছিলেন জলের গানের গায়ক রাহুল আনন্দ। তবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সহিংসতা থেকে রক্ষা পাননি তিনি। সরকার পতনের দিন অর্থাৎ গেল সোমবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে থাকা শিল্পীর বাড়িতেও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। নিজেদের শিল্পকর্ম ও বাড়িটি বাঁচাতে শেষ আকুতি করেছিলেন রাহুল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

অগ্নিসংযোগে রাহুলের বাড়িতে থাকা তিন হাজারের মতো বাদ্যযন্ত্র ভস্মীভূত হয়েছে। যেগুলোকে তিনি নিজ হাতে তৈরি করেছিলেন। দেখভাল করতেন সন্তানের মতো।

হামলাকারীদের সঙ্গে কথোপকথন প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘কিছু ছেলেপেলে এসে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলল, তাদের বললাম, আমি তো তোমাদের জন্যই গান করি। এই আন্দোলনেরও সমর্থক ছিলাম। তবুও আমার বাড়িতে কেন হামলা করছ? তারা বলল, “আপনারা বের হয়ে যান, না হলে বিপদ হবে।” পরে আমরা বেরিয়ে চলে আসি।’

ধানমন্ডির ওই বাড়িতে রাহুল ও চিত্রশিল্পী ঊর্মিলা শুক্লা দম্পতি ভাড়া থাকেন, সঙ্গে ছেলে তোতা। পুরোনো বাড়িটির কোনো নাম নেই, ভালোবেসে তার এর নাম দিয়েছিলেন ‘ভাঙাবাড়ি’।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় রাহুল লিখেছেন, ‘তবু শান্তি আসুক আমার সোনার দেশে, যেকোনো মূল্যে। সে মূল্য যদি হয় আমার সোনার সংসারের পোড়া ছাই অথবা বাদ্যযন্ত্র পোড়া কয়লার বিনিময়ে, তাতেও দুঃখ নেই। ভালোবাসি বাংলা আর বাংলার মানুষকে, আমি বাংলায় গান গাই। সবার ভালো হোক। ভালো থাকুক আমার বাংলাদেশ।’

রাহুলের মতে, ‘কথা বলার মতো স্বাভাবিক নই আমি। প্রায় তিন হাজার বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই। ওরা আমার সন্তানের মতো। আমি একটা মানুষ বাচ্চাকে জীবিত নিয়ে বের হতে পেরেছি। বাকিরা পুড়েছে বা লুট হয়েছে।’

এদিকে, জলের গান তার ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘জলের গানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি ছিল না; ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। যারা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তারা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সব সময় খোলাই থাকত। তাতে তালা দেওয়া হতো না। যে কেউ, যেকোনো দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছোতে পারে, সেই ভাবনায়। আর যারাই দিনের যেকোনো প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সকলেই একটি চিত্রের সঙ্গে খুব পরিচিত, তা হলো রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তার নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন।’

ব্যান্ডটি আরও লিখেছে, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটিতে। তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন, তারা সকলেই খবরটি জানেন। হ্যাঁ! রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার, এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু রাহুল দা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব!’

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তার নিজ ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তার সন্তানের মনে; যার বয়স কি না মাত্র ১৩ বছর- ভাবতেই কষ্ট হয়। এতদিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে!’

অন্যদিকে, রাহুলের প্রতি এমন হামলায় ক্ষুব্ধ শিল্পাঙ্গনের মানুষেরা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গেটে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষজন।