লক্ষ্মীপুরে ১০ জনের মৃত্যু
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে লক্ষ্মীপুরে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ জন ও পিটুনিতে ৬ জনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তারা হলেন- মো. কাউছার, সাব্বির হোসেন ও মিরাজ হোসেন। এছাড়া মূমূর্ষ অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে আফনান নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সালাহ্ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে ৩ জনের মরদেহ ও শহরের শাখারীপাড়ার মুখে ৩ জনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ৬ জনের মরদেহ এখনো উদ্ধার করা হয়নি। এদের মধ্যে হারুন মেম্বার, আহমেদ শরীফ, রাসেলের নাম জানা গেছে। বাকি ৩ জনের নাম এখনও জানা যায়নি।
এই ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংবাদকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান টিপু ও ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আন্দোলনকারীদের কড়া পাহারায় অবরুদ্ধ রয়েছেন বলে জানা যায়।
গোলাগুলির ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আজ রবিবার বিকেল ৫টার দিকে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরএমও অরুপ পাল বলেন, ‘অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছি। তারা গুলিবিদ্ধ। একজনকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায়। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
অভিযোগ রয়েছে, দুপুর ১২টার দিকে শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু আন্দোলনকারীদের গুলি করে। দুপুর ২টার দিকে তার শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার বাসা ঘেরাও করলে ফের ছাদ থেকে টিপু আন্দোলনকারীদের গুলি করেন। এতে শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানা যায়। এতে বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীরা টিপুর তমিজ মার্কেটস্থ বাসায় পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এছাড়া আন্দোলনকারীরা শহরের উত্তরতেমুহনীতে আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচির চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিনের চৌধুরী নয়ন এমপির বাসভবনেও ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। এরপর বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের লোকজন বাগবাড়ি দখলে নেয়। তখন লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভাঙচুর করে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে মাদাম ব্রিজ এলাকার দিকে গেলে আওয়ামী লীগকে আন্দোলনকারীরা বাধা দেয়। এতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। গোলাগুলি ও ইটপাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বেশকয়েকজন আহত হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ পিছু হটে। আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ হীরা বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ঝুমুর অতিক্রম করছিলাম। এসময় জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। গুলিও করেছে। চাপাতি দিয়ে আমাদের অনেককে কুপিয়েছে।’