সিলেটে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ
সিলেটের চৌহাট্টায় শহীদ মিনারের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারীরা। আশে পাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। বিক্ষোভে শিক্ষার্থী ছাড়াও নানান শ্রেণিপেশা ও বয়সের মানুষ অংশ নিয়েছেন। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
আজ শনিবার বেলা ২টার দিকে শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা।
এদিকে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা ও দেশব্যাপী হত্যা বন্ধের দাবিতে সিলেটে মানববন্ধন করেছেন সিলেটের সচেতন সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমার দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন আমার সন্তানের ওপর গুলি চালায়, তখন আর ঘরে বসে থাকা যায় না। এই হত্যা ও আতঙ্কের দায় সরকারকে নিতে হবে। দেশব্যাপী সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন মানববন্ধনে সমবেত শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
সন্তানদের বন্দুকের মুখে রেখে আমরা সুখনিদ্রায় যেতে পারি না, আমরা দাঁড়ালাম শিক্ষার্থীদের পাশে।
আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে হত্যা, অব্যাহত ধরপাকড় ও নিপীড়ন-নির্যাতনে অভিভাবক ও নাগরিক হিসাবে আমরা সংক্ষুব্ধ। আলোচনা হোক আর অনুশোচনার সিদ্ধান্ত হোক- অবিলম্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেলা ১১টায় আয়োজন করা হয় সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাবেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহ্ববান করা এই অভিভাবক সমাবেশে শতাধিক অভিভাবক ও নাগরিক অংশগ্রহণ করেন।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জু্ন। সমাবেশের সঞ্চালনা করেন যুব সংগঠক মতিউর রাফু।
আব্দুল করিম কিম বলেন, কোটা সংস্কারের একটি নির্দোষ দাবিকে অসহনীয় পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার দায় সরকারের। আরিচা রোডের ট্রাক ড্রাইভারের মত বেপোরোয়া রাষ্ট্র পরিচালনার খেসারত আজ দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে। দেশ আজ বিপন্ন। আমাদের সন্তানেরা বন্দুকের মুখে বুক পেতে দাঁড়াচ্ছে। যারা বন্দুক নিয়ে তাদের রুখে দিতে চাইছে ওরাও আমাদের ভাই, আমাদের সন্তান। এই অসহ্য পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছি না। রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন।
স্বাগত বক্তব্যে সুদীপ্ত অর্জুন বলেন, চলমান ছাত্র আন্দোলনে সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছে। তাদেরকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে। প্রশাসনকে মানুষের আবেগ ও সংবেদনশীলতা বুঝতে হবে। একজন সাধারণ ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সমাজের মননে এর প্রতিক্রিয়া হয়। আর দুর্বৃত্তরা এর সুযোগ নেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এক চরম দুঃসময় ও ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছি। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতা, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, ব্যাপক প্রাণহানি, সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞে দেশের মানুষ আজ উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় আছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা সুযোগ সন্ধানী সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়রানির আশঙ্কা।’
তাই ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন হয়রানি বা বিপদের সম্মুখীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। দল-মত, জাতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে যে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যদি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বাহিনী বা সংস্থা দ্বারা হয়রানির শিকার হলে কিংবা নিজেকে বিপন্নবোধ করলে আমাদের জানাতে পারেন। সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট’ আপনাদের পাশে থাকতে চেষ্টা করবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রবীন রাজনীতিবিদ আনসার খান, সাংস্কৃতিক সংগঠক মনির হেলাল, রাজনৈতিক সংগঠক উজ্জ্বল রায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন, পলিটিক্যাল স্ট্যাডিজের অধ্যাপক ড দিলারা রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান ওয়েছ ও রেজাউল কিবরিয়া, রোটারিয়ান সামসুল হক দিপু, অভিভাবকদের পক্ষে ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনি, অ্যাডভোকেট জাকিয়া জালাল, রুহুল কুদ্দদু মাসুম, মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক কর্মকর্তা রোমেনা বেগম রোজী, শিশু কিশোর সংগঠন উষার পরিচালক নিগাত সাদিয়া প্রমুখ।