‘আমার কলিজায় সয় নারে, এই শোক আমি কেমনে সইব’
‘আমি তো ওর বাপ, ওই আমার পোলা; আমারে রাইখা ওই কেন না ফেরার দেশে আগে চইলা গেলো। আমার কলিজায় সয় নারে, আমি এই শোক কেমনে কইরা সইব’ বলে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া রাজুর বাবা এরশাদ আলী। আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিনের বালেঙ্গা গ্রামে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাইতে) গাড়ি বিস্ফোরণে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার পাঁচ প্রবাসী নিহত হন গত ৭ জুলাই রবিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। কাজে যাওয়ার পথে আবুধাবি রোডের সাহামা এলাকায় পৌঁছালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা দুবাইয়ের আজমান প্রদেশে বসবাস করতেন।
এর মধ্যে নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বালেঙ্গা গ্রামের চারজন ও দোহার উপজেলার দোহার বাজার এলাকার একজন প্রবাসী। সকালে ওই পাঁচজন একই গাড়িতে করে কাজের স্থানে যাচ্ছিলেন। তখন গাড়িটি বিস্ফোরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- নবাবগঞ্জের বালেঙ্গা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মো. রানা (৩০), আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. রাশেদ (৩২), শেখ এরশাদের ছেলে মো. রাজু (২৪), শেখ ইব্রাহীমের ছেলে ইবাদুল ইসলাম (৩৪) এবং দোহার বাজার এলাকার মো. মঞ্জুর ছেলে মো. হিরা মিয়া (২২)।
জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান খোকন বলেন, আসলে এমন ঘটনা মেনে নেওয়ার মত না। এভাবে যেনো কারো বাবা মার বুক খালি না হয়।
তিনি বলেন, নিহত রাজু আমার ভাতিজা সে গত বছর প্রথম সফরে এসে দোহার উপজেলার বাহ্রা এলাকার ফারজানাকে করেন। ফারজানার গর্বে তার সাত মাসের বাচ্চা। সন্তান দুনিয়ায় আসার আগেই এতিম হয়ে গেল। ১০ বছর বয়সে রাশেদের বাবা মারা যান। মা একাই সন্তানদের লালন পালন করেন। আজ তারা সুখের দেখা পেয়েছে। কিন্তু বেশি দিন দুনিয়ায় থাকতে পারল না। রাশেদের সাড়ে তিন বছরের ছেলে ও দেড় বছরের মেয়ে সন্তান আছে। এছাড়া রানা ৮ বছর আগে বিদেশে গিয়েছে তার বিয়ে ঠিক করা ছিল, এবার সফরে আসলে তার বিয়ে হতো এবং ইবাদুলের সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টায় দুবাই থেকে আসা বিমান ঢাকার হযরত শাহ জালাল (রঃ) বিমান বন্দরে আসার কথা থাকলেও সকাল পৌনে ১০টায় ল্যান্ড করে। পরে সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোয়া ১২টার দিকে লাশবাহী এম্বুলেন্স বালেঙ্গা গ্রামের দিকে ছাড়া হয়। বেলা আড়াইটার দিকে বালেঙ্গা এসে পৌঁছায়।
সরেজমিনে গিয়ে সেখানে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকের চোখ ছিল ভিজা। আত্নীয় স্বজনের কান্নায় ওই এলাকার বাতাস যেনো ভারি হয়ে গিয়েছে। এমন ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাদ আসর জানাজা শেষে বালেঙ্গা সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেসমা আক্তার বলেন, চলছে বাঙালিদের শোকের মাস। কিন্তু এই প্রবাসীদের মরদেহ আমাদের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে আরও এক শোকের জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনা মেনে নেওয়ার মত নয়। আমরা দোয়া করি মহান আল্লাহ তাদের জান্নাত নসিব করেন।