‘আন্দোলন চলবে’ জানিয়ে স্ট্যাটাস, গায়েব সারজিস-হাসনাতের ফেসবুক আইডি
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার হেফাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরপর থেকে তাদের ফেসবুক পেজ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
টানা ছয় দিন ডিবির হেফাজতে থাকার পর আজ দুপুরের দিকে আরও চার সমন্বয়কের সঙ্গে মুক্তি পান সারজিস ও হাসনাত। পরে তারা নিজেদের ফেসবুক পেজে আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা লিখেছিলেন সারজিস
সারজিস আলম তার পোস্টে লেখেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি।’
তিনি লেখেন, ‘আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারাদেশে আমার স্কুল-কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ সমন্বয়ক লেখেন, ‘যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেপ্তারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিৎ ছিল না!’
তিনি লেখেন, ‘কোথায় মহাখালীর সেতুভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতুভবনে হামলার জন্য গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলেন। সাথে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।’
সারজিস আলম লেখেন, ‘রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজনভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কি ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?’
তিনি লেখেন, ‘৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ৬ জনকে আটকে রাখা যায়, কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দূর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত, সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন?’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
সারজিস লেখেন, ‘পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে একটা (কথা) বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর। ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নেব।’
তিনি লেখেন, ‘এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশআন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে, ততদিন এ লড়াই চলবে।’
স্ট্যাটাসে যা লিখেছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেপ্তার গণঘৃণার নামান্তর। আমাদের মুক্তি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তি পাবেন। এই গণগ্রেপ্তার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়; বরং আমাদের সমগ্র সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত।’
তিনি লেখেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন শুধু ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়; বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’