‘বিচার চাইলে কি আমার বাপধনরে ফিরে পামু’
‘বিচার কার কাছে চাইব? বিচার চাইলে কি আমার বাপধন রে ফিরে পামু।’ আজ বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশে রেললাইনে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলেছিলেন কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মো. আবু জ্বরের (২২) মা সুফিয়া বেগম।
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মা তোমার কি লাগব? এখন আর কে বলবে এই কথা। আমার সোনার চান তো কোনো আন্দোলনে যায়নি। সে তো কোনো দল করত না। আমরা গরীব মানুষ, আমরা কি রাজনীতি বুঝি। কি জন্য আমরা পোলাডারে গুলি মারা লাগব। আমার সোনা কইছে ‘‘মা আমারে বাঁচাও।” ওর ভাইরে কয়ছে ‘‘ভাই আমারে বাঁচাও”।’
সুফিয়া বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলের কী অপরাধ? কেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো? আমার সন্তান হত্যার বিচার আমি কার কাছে চাইব? আপনজন হারানোর বেদনা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, আল্লাহই সঠিক বিচার করবেন।’
ছেলের আয়েই সংসার চলতো সুফিয়া বেগমের। কিন্তু সেই ছেলে ঢাকায় কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। স্বামীর পর ছেলেকে হারিয়ে এখন অকূল পাথারে তিনি।
আবু জ্বরের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ পৌর এলাকার নয়ানগর গ্রামে। কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে ঢাকার বসুন্ধরায় গত ১৯ জুলাই তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ দিন পর মারা যান।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যুমনা ফিউচার পার্ক এলাকায় খালার বাসায় যাচ্ছিলেন আবু জ্বর। বসুন্ধরা এলাকায় আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলি তার পেটে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে প্রথমে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর ব্যয়ভার বহন করতে না পারলে পরে ২৪ জুলাই মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৭ জুলাই ৯ দিন চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান তিনি। আবু জ্বর ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় থাকতেন।
নিহতের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন ভাইয়ের ছোট আবু জ্বর। ছোটবেলায় বাবা মারা গেছেন। আমরা গরীব মানুষ। অভাবের কারণে আগে একটা বাসায় কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করত আবু জ্বর। পরে ড্রাইভিং শিখে গত ৩ মাস ধরে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাইভেটকার চালাত।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিনের চিকিৎসায় আমাদের যা ছিল সব শেষ। আবু জ্বর যে মালিকের গাড়ি চালাইত তারা আড়াই লাখ টাকা দিয়েছিল। ধারদেনা করে কোনো রকম চিকিৎসা ব্যয় মিটিয়েছি।’
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস. এম. আলমগীর বলেন, ‘আমি পরিবারের খোঁজখবর নিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি সহযোগিতা করব।’