আধুনিক পরিপূর্ণ মানুষের প্রতিচ্ছবি
ববিতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা। বাংলাদেশের পতাকা যার হাত ধরে প্রথম বিশ্বের কোনো চলচ্চিত্র উৎসবে উড়েছিল। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনটির আগে কানাডা চলে যাওয়ার কথা ছিল ববিতার। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে কানাডা যেতে পারেননি। হাসপাতালে দুদিন থাকতে হয়েছে। তাই এবার ছেলে অনিকের সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করা হচ্ছে না। তবে ববিতা জানান, শরীরটা একটু ভালো অনুভব করলেই কানাডার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
অভিনেত্রী বলেন, ‘জন্মদিন তো আসলে সেভাবে উদযাপন করা হয় না। এবার অনিক বলেছিল, জন্মদিনে আমাকে নানান ধরনের সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। তাই ঢাকায় নিজ বাসাতেই জন্মদিনের পুরোটা প্রহর কাটবে। আমার বড়, ছোট বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তো আছেই। সবার কাছে দোয়া চাই- যেন আল্লাহ সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। আর গেল বছর ডালাসে ববিতা দিবসের যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে আমাকে এবং প্রিয় বাংলাদেশকে যে সম্মাননা জানানো হলো- তাতে সত্যিই আমি ভীষণ গর্বিত, আনন্দিত। এ সম্মান শুধু আমাকে নয়, বাংলাদেশকেও প্রদর্শন করা হয়েছে। সত্যি আমি কোনো দিন কল্পনা করিনি, জীবনে এমন মুহূর্ত আসবে। জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে, যা জীবনের জন্য আশীর্বাদ হয়েই আসে। এই সম্মান আমার জীবনে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে। জীবন যেন আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে।’
‘একজন আধুনিক পরিপূর্ণ মানুষের প্রতিচ্ছবি ববিতা’- কথাটি বলেছিলেন আমজাদ হোসেন। এ বয়সেও তিনি স্মার্ট। পোশাক-পরিচ্ছদে এখনো অনেক রুচিশীল। এ বয়সেও প্রচুর পড়াশোনা করেন। যেখানেই যান, একটি কলম ও নোটবুক সঙ্গে রাখেন। যে কোনো অজানা তথ্য জানলেই টুকে নেন নোটবুকে। এ কারণে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে মানুষকে চমকে দিতে পারেন। সিনেমা দেখার নেশা থাকলেও কাজ করার ইচ্ছে ববিতার কোনো দিনই ছিল না। তারপরও করতে হয়েছে দুলাভাই জহির রায়হানের জোরাজুরিতে।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
ববিতা বলেন, ‘জহির ভাই যখন সংসার ছবিতে অভিনয়ের কথা বললেন, আমি বেঁকে বসলাম, কিছুতেই অভিনয় করব না। তখন আমার আম্মা বললেন, জামাই মানুষ, উনি চাইছেন, তুই না করলে মন খারাপ করবেন। সুচন্দা আপাও বললেন, তোর দুলাভাই ছবির ডিরেক্টর। আমি নিজেও তো অভিনয় করছি। কেন করবি না? তুই যদি না করিস, তাহলে খুব খারাপ দেখা যায়। তুই কর। সবার চাপাচাপিতে আমি রাজি হলাম। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। ছবিতে রাজ্জাক ভাই আমার বাবা, সুচন্দা আপা আমার মা। খেলার ছলেই আমি কাজটা করে ফেললাম। আমার পারিবারিক নাম পপি হলেও সংসার ছবিতে আমার নাম দেওয়া হয়েছিল সুবর্ণা। এরপর ছবিটি মুক্তি পেল এবং সুপার ফ্লপ।’
ববিতা হওয়ার আগে তিনি টিভিতে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। আবদুল্লাহ আল-মামুনের একটি কলম। নাটকটি যখন প্রচার হয়, তখন জহির রায়হান পশ্চিম পাকিস্তানে একটি উর্দু ছবি করবেন, নাম ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’। নায়িকা হলেন শবনম। নায়ক নাদিম। ছবির সব অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়ে যাওয়ার পর শবনম কোনোভাবেই নাদিমের শিডিউলের সঙ্গে তার ডেট মেলাতে পারছিলেন না। তখন প্রযোজক বললেন, আমরা বরং একজন নতুন নায়িকা নিয়ে নিই। সেই নায়িকাই আজকের ববিতা।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ববিতা। বাবা নিজামুদ্দীন আতাউর একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা চিকিৎসক। বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তার পৈতৃক বাড়ি যশোরে। শৈশব এবং কৈশোরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউসের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় বোন সুচন্দা চলচ্চিত্রাভিনেত্রী, বড় ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজ ভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোট বোন চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোট ভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। এ ছাড়াও অভিনেতা ওমর সানী তার ভাগ্নে এবং অভিনেতা রিয়াজ তার চাচাতো ভাই। চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান তার ভগ্নিপতি।
নায়িকা হিসেবে ববিতা প্রায় দেড়শ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সুন্দরী’, ‘একমুঠো ভাত’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সোহাগ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘ওয়াদা’, ‘লাঠিয়াল’, ‘কথা দিলাম’, ‘নিশান’, ‘এতিম’, ‘লাইলী মজনু’, ‘দূরদেশ’, ‘মিস লংকা’, ‘ফুলশয্যা’, ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’, ‘ফুলশয্যা’।