পর্যটক শূন্য কুয়াকাটা, লোকসান প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দেশব্যাপী সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে কুয়াকাটার পর্যটনশিল্প। কুয়াকাটায় কর্মরত ১৬টি শ্রেণি পেশার প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বেকার দিন কাটাচ্ছেন। বিগত ১১ দিনে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে দাবি করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর গত ১৭ জুলাই (বুধবার) থেকে কুয়াকাটায় পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। বাতিল হয়ে যায় অনেক হোটেলের আগাম রুম বুকিং।
এর আগে ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) কুয়াকাটায় আটকে পরা প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটককে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আজ রবিবার সকাল থেকেই পর্যটননগরী কুয়াকাটার বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায় সৈকতে পর্যটক নেই বললেই চলে। হোটেল ও মোটেলগুলোতে অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুই চারটি খাবার হোটেল খোলা থাকলেও অধিকাংশ রয়েছে বন্ধ। দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ পর্যটক আসা শুরু করেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কুয়াকাটার অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন খান জানান, বিগত প্রায় ১১ দিন ধরে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও এখনও পর্যটকদের আগমন শুরু হয়নি। পর্যটক থাকুক আর না থাকুক, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হয়। প্রতিটি হোটেল কর্তৃপক্ষ এখন একপ্রকার নাজেহাল অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। প্রতিদিন কি পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে সেটা টাকার হিসেবে অনেক। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে পর্যটন ব্যবসায় পুরোপুরি ধস নামবে।
এদিকে কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবৎ আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ৫০ জন গাইড বেকার সময় কাটাচ্ছেন। করোনা মহামারির পরে কুয়াকাটায় পর্যটনশিল্পে এতো খারাপ সময় এর আগে দেখিনি। এরকম চলতে থাকলে আমাদের গাইডরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বে।‘
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব কুয়াকাটাতেও পড়েছে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে লোকসান গুনছেন হোটেল মালিকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কুয়াকাটায় প্রায় ২০০টির বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আমরা ধারণা করছি, প্রায় ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বিগত কয়েকদিনে। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।‘
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন জানান, “বিগত বেশ কিছুদিন আন্দোলন ও কারফিউ চলার কারণে পর্যটকরা আসতে পারেননি। আমরা কুয়াকাটায় যে সকল পর্যটক আটকা পড়েছিলেন তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রেখেছি এবং প্রসাশনের সহযোগিতায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যেহেতু এখন দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পথে, তাই ধারণা করছি খুব শিঘ্রই পর্যটকদের চাপ বাড়তে শুরু করবে। এখন যে অল্প সংখ্যক পর্যটক আসতে শুরু করেছেন, তাদের যেন কোনও ধরনের অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে সার্বিক খোঁজ খবর রাখছি। আমাদের টহল ও নজরদারি রয়েছে পুরো এলাকাজুড়ে। আশা করছি খুব শিঘ্রই পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”