গোপনে শুটিং বাংলাদেশে, কাজ বন্ধ কলকাতায়

বিনোদন ডেস্ক
২৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:১৪
শেয়ার :
গোপনে শুটিং বাংলাদেশে, কাজ বন্ধ কলকাতায়

বাংলাদেশে এসে গোপনে শুটিং করায় কলকাতার নির্মাতা রাহুল মুখোপাধ্যায়কে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেখানকার নির্মাতাদের সংগঠন ‘ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’। ফিল্ম ফেডারেশনকে না জানিয়ে টালিউডের এই নির্মাতা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির জন্য একটি ওয়েব সিরিজের কাজ করছিলেন। ফলে পরিচালককে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সেখানকার সিনেমার সংস্থাগুলোও।

তবে বিষয়টি শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়; নির্মাতার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে কিনা, এ নিয়ে টলিউডে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। রাহুলকে ঘিরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, রাজ চক্রবর্তীসহ অনেকে। তারা সবাই একটি ভাইরাল পোস্ট শেয়ার করেছেন। যেখানে সামনে এসেছে টালিউড ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠার বিষয়টি।

এদিকে, পরিচালক ও টেকনিশিয়ানস ফেডারেশনের দ্বন্দ্বও মিটছে না। গতকাল শনিবার শুটিং সেটে রাহুল উপস্থিত থাকায় কাজ করেননি টেকনিশিয়ানেরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্মাতারা। তাদের প্রশ্ন- এবার পরিচালকেরা যদি কাজ বন্ধ করে দেন তাহলে কোনো কাজ এগোবে তো?

এমন পরিস্থিতিতে বেশকিছু সমাধান-সূত্র তুলে ধরেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তার দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্ট রীতিমত ভাইরাল নেটদুনিয়ায়। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘আজ সকালে টেকনিশিয়ান স্টুডিওয় বাংলা ছবি, টেলিভিশনের পরিচালকেরা ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের সামনে কিছু প্রশ্ন রেখেছে। বহু দিন ধরেই রাখছে, আজ ভঙ্গিটা আন্দোলনের। তার একটি বা অনেক কারণ রয়েছে। এই আন্দোলনের গোড়ায়, আগায়, সামনে, পিছনে, ডান দিক, বাঁ দিক, কোথাও সিনিয়র, জুনিয়রসহ সমস্ত রকমের টেকনিশিয়ান, সিনে-শ্রমিকদের স্বার্থহানির এক ফোঁটা উদ্দেশ্য নেই। বিষয় সেটা নয়ই। বিষয় হলো নীতির।’

পোস্টে আরও বলা হয়, বিষয়টা একই পরিবারের। পরিবারটি বাংলা বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি। তাই এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। ‘আমরা-ওরা’ নেই। ফলে বর্তমান সমস্যা কাটিয়ে উঠতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এলে আর সমাধানের পথ পাওয়া যাবে না, বিপরীতে সংকট আরও বাড়তে থাকবে বলেও মত দিয়েছেন পোস্টদাতারা।

প্রসেনজিতের ওই পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ‘পরিবারের কারও শরীর খারাপ হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করাতে বলেন। নীতি নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সকলে বসে সেই পরীক্ষাগুলো করে নেওয়াই উচিত। যদি সত্যিই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে হয়, তা হলে সবার মতামত নিয়েই চলতে হয়।’

পরিচালক, অভিনেতা থেকে শুরু করে যিনি আলো নিয়ে কাজ করেন, প্রত্যেকের মতামত জরুরি বলে দাবি করা হয়েছে ফেসবুক পোস্টে। নির্মাতাদের মধ্যে অতনু ঘোষ, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, দেবালয় ভট্টাচার্যেরাও এটি শেয়ার করেছেন তাদের ফেসেবুকের পাতায়।

ভাইরাল হওয়া সেই পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘বাংলা ছবির স্বাস্থ্য ভালো নয়, এটা কোনো ধারণা নয়, বাস্তব সমস্যা, তাই এর সমাধানও কোনো ধারণা দিয়ে হবে না। বাস্তব সমাধান দিয়েই করতে হবে। সেখানে ক্ষমতার লাফালাফি দেখালে হবে না, ভোট গুনলে হবে না। এটা রাজনৈতিক সমস্যা নয়, রাজনৈতিক কায়দায় এই সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যা বিনোদন শিল্পীদের, তাদের কাজের পরিবেশের, তাদের সম্মানের। তাদের মানে সকলের কথা বলা হচ্ছে। যিনি মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন, এবং তার জন্য যিনি জল-খাবার দেন, তারও।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের জেরে গোটা ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে এক বড় আসন্ন বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নানা রকম ঘটনা দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া যায়। বাইরের বিজ্ঞাপন না আসা, বাইরের ছবির কাজ না আসা। এসবেরই পথ সরু হতে হতে বন্ধ হতে চলেছে। আজকের বেশি টাকা কাল যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে বিনোদন শিল্প বলে আর কিছু থাকবে না। এটা রকেট সায়েন্স নয়, কঠিন অংক নয়। একটু মাথা খাটালেই বোঝা যাবে।’

শঙ্কা প্রকাশ করে পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এই ভাবে চলতে থাকলে, ৮০ সালের পর আবার সেই দিন আসবে, যখন নতুন এসি স্টুডিওগুলো ফের গুদাম হয়ে যাওয়া ছাড়া আর পথ থাকবে না।’