ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা মরদেহ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাজেদা আক্তার (৫৫) নামের এক গৃহবধূর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিজ ঘরের মেঝেতে ওই গৃহবধূর গলাকাটা মরদেহ পড়ে ছিল।
গতকাল বুধবার দুপুরে মিরসরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাজেদা মিরসরাই উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়র্ডের পশ্চিম মলিয়াইশ গ্রামের লাল মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ির মামুন চৌধুরী খানের স্ত্রী। তারা স্বামী-স্ত্রী মিরসরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন।
সাজেদার স্বামী মামুন চৌধুরী খান বলেন, ‘আমি সকাল সাড়ে ১০টায় বাজারে যাই কাচাবাজার করার জন্য। দুপুর সাড়ে ১২টায় বাজার নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে দেখি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আমার স্ত্রীর জবাই করা লাশ পড়ে আছে মেঝেতে। রুমের পুরো ফ্লোরে রক্ত। আমি শারীরিকভাবে দীর্ঘদিন অসুস্থ হওয়ায় রক্তাক্ত মরদেহ দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। আমাকে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে রাখে। পরে বাসার পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন চিৎকার শুনে এসে দুপুর ২টায় দরজা খুলে দেন।’
বাসার কেয়ারটেকার রোজিনা আক্তার রুমা (৩০) বলেন, দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় মামুন চৌধুরীকে বাজার নিয়ে বাসায় ঢুকতে দেখি। দুপুর ২টার সময় তিনি ভিতর থেকে হাত দিয়ে দরজায় বাড়ি দিতে থাকেন দরজা খোলার জন্য। আমি দরজা খুলে দেখি তিনি অস্বাভাবিকভাবে ঘামাচ্ছেন। তখন তার স্ত্রী সাজেদার রক্তাক্ত মরদেহ বাসার মেঝেতে পড়ে ছিল। আমি আর ভিতরে যাইনি। পরে মিরসরাই থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
মামুন চৌধুরীর ছোট ভাই আলমগীর চৌধুরী জানান, তার বড় ভাই দীর্ঘদিন সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন। তারা তিন বছর ধরে বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। তাদের ২ ছেলে ১ মেয়ে। দুই ছেলে প্রবাসী। বড় ছেলে আজাদ হোসেন রফিক স্ত্রীসহ ওমানে থাকেন। একমাত্র মেয়ে আয়শা আক্তার স্বামীর সাথে চট্টগ্রাম হালিশহর হাউজিং সোসাইটিতে ভাড়া থাকেন।
তিনি জানান, ছোট ছেলে আমজাদ হোসেন (২৮) ৮ জুলাই দেশে এসেছেন বিয়ে করার জন্য। গ্রামের বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে গৃহস্থালি কাজগুলো চলছে। ঘটনার দিন সকাল ১১টায় আমজাদ হোসেন বাসা থেকে তার তালতো ভাই তারেকসহ বাড়িতে চলে যান ঘরের কাজ তদারকি করার জন্য।
আলমগীর চৌধুরী আরও জানান, ঘরে সাজেদা আক্তারকে গৃহস্থালি কাজে সহযোগিতার জন্য একজন মহিলা ছিলেন। তিনি দুধ রোজ দিতেন প্রতিদিন। ঘটনার দিন ওই মহিলা সাজেদা আক্তারের স্বামী মামুন চৌধুরী খান, ছেলে আমজাদ হোসেন ও এক আত্নীয় তারেককে নাস্তা তৈরি করে দেন। নাস্তা করে তারা চলে যাওয়ার পর ওই মহিলা বাসায় একা ছিলেন। তাকে ঘটনার পর পাওয়া যায়নি।
সাজেদার বোনের ছেলে আবদুল মতিন জানান, ঘরে আলমিরা খোলা ছিল। আমজাদ হোসেন গতকাল ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উঠান। সকালে ৫ হাজার টাকা মিস্ত্রিদের জন্য নিয়ে যান। বাকি ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘরে বিয়ের জন্য স্বর্ণালংকার ছিল প্রায় ১০ ভরি। সেগুলো নিয়েছে কিনা এ পরিস্থিতিতে বলা যাচ্ছে না।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, সাজেদার হাত-পা বাঁধা গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল। পুলিশ সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ ঘটনায় মামলা হবে। এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে খুনের রহস্য।