নাশকতাকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না

রংপুর ব্যুরো
২৫ জুলাই ২০২৪, ১৭:৩৩
শেয়ার :
নাশকতাকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না

নাশকতাকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি সংগঠিতভাবে কোটা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ধ্বংস-নৈরাজ্য চালিয়েছে। তারা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, তারা জঙ্গির উত্থান ঘটিয়েছিল। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে তাদের উদ্দেশ্যেই ছিল রাষ্ট্রকে অকার্যকর করা।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ প্রথমে টিয়ারসেল, এরপর সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট এবং ছোড়া গুলি মেরেছে, কিন্তু দুস্কৃতিকারীরা অ্যানাউন্স করে আন্দোলনকারীদের বলেছে এগুলোতে কিছু হয় না, এগিয়ে চলো। একদম যুদ্ধক্ষেত্রের মতো অবস্থা হয়েছিল। তারা আন্দোলনের সামনে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে এসেছিল। সহিংসতাকারীদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। মদদদাতা, উসকানিদাতা এবং এটিকে নিয়ে যারা ফায়দা লুটতে চেয়েছে তাদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়ি ভাংচুর, গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা, ডিসি ক্রাইম ও ডিবি অফিস, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি-সংযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, মহানগর শ্রমিক লীগ অফিস এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিস ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমরা নানা আন্দোলনে ছিলাম। কখনো দলীয় অফিস, থানা ভাংচুর ও অগ্নি-সংযোগ করিনি।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল সেতু ভবনে। সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে। স্বপ্নের মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আমি পুলিশ, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। তারা জীবন বাজি রেখে দেশ রক্ষায় কাজ করেছে। আমরা সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করব।’ 

কারফিউ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। প্রতিদিনই আলোচনা করে কারফিউ শিথিলের ব্যাপারে সময় বাড়ানো হচ্ছে। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমার কাছে খুব কষ্ট লেগেছে যখন শুনেছি, রংপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে দুষ্কৃতকারিরা ভাঙচুর করল, আগুন দিল, তখন তো আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনারা কীভাবে ভুলে গেলেন আমরা বীরের জাতি, দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না, শুধু জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারে ৫ পার্সেন্ট মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা রাখা হয়েছে। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের সন্তানদের ৩০ বছর পার হয়েছে অনেক আগে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা এখন জিরো। এখন ৯৮ পার্সেন্ট মেধা কোটা। তারপরও ছাত্রনেতারা এখনও কেউ বলল না, ‘‘আমাদের আন্দোলন আমরা বন্ধ করলাম, কালকে থেকে ভার্সিটিতে যেতে চাই’’। তাই ছাত্রনেতাদের বলতে চাই, তোমরা ভুল করছ। এখনও যদি তোমরা ভুল করে থাক। এই যে সম্পদ নষ্ট হলো, অনেক মানুষ মারা গেল। এর দায়িত্বটা কে নেবে? নিজের কাছে প্রশ্ন কর, তারপর সিদ্ধান্ত নাও।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে, থানা লুট করেছে, ভার্সিটির সম্পদ নষ্ট করেছে, ভিসিকে হত্যার চেষ্টা করেছে, সবাইকে চিহ্নিত করা হবে। যারা অর্থায়ন করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যেই পর্যন্ত আমরা সবাইকে শনাক্ত করতে না পারব, সেই পর্যন্ত আমাদের পুলিশি অভিযান, র‌্যাবের অভিযান, বিজিবির অভিযান, আনসারের অভিযান চলবে। সেই সঙ্গে পাশে সেনাবাহিনী আছে এবং থাকবে।’ 

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা বিলুপ্ত করে দিলেন। তারপর দুজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট করলেন। এরপর ছাত্ররা কোটা আন্দোলন শুরু করে দিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘এটা কোর্ট যেহেতু করছে, তোমরা কোর্টে একটা আবেদন কর।’’ ছাত্ররা তা না করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টের আন্দোলন শুরু করে দিলেন। এরপর সেতু ভবন পুড়ে দিল, ত্রাণ অধিদপ্তরে আগুন দিল। কোটা আন্দোলনের সাথে সেতু ভবনে, ত্রাণ অধিদপ্তরের সঙ্গে কী সম্পর্ক। কোটা আন্দোলনের সঙ্গে বিটিভির কী সম্পর্ক। মেট্রোরেলে আগুন দিল। পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করল।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নরসিংদী জেলখানায় হামলা করে কাদের ছিনিয়ে নিয়ে গেল, তাদের লোককে। যারা জঙ্গি, তাদের ছিনিয়ে নিল। তারা শুধু রংপুরের থানা নয়, যাত্রাবাড়ি থানা, মোহাম্মদপুর থানা, উত্তরা থানায় আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে ধ্বংস করা। তবুও পুলিশ মনোবল হারায়নি। একটানা ২০ ঘণ্টা ধরে তারা ডিউটি করেছে।’ 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, সংসদ সদস্য জাকির হোসেন, আসাদুজ্জামান বাবলুসহ অন্যান্য নেতারা। 

মতবিনিময়ের আগে ১৬ জুলাই থেকে পরবর্তী রংপুরে যে সহিংসতা ঘটে তার একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। সেটি পরিচালনা করেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। 

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কোটা আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন, রংপুর মহানগর ডিবি কার্যালয়, নবাবগঞ্জ ফাঁড়ি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন।