নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে নামতে পারছে না জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
২৪ জুলাই ২০২৪, ২২:০৩
শেয়ার :
নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে নামতে পারছে না জেলেরা

বৈরী আবহাওয়া আর সাগর উত্তল থাকায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে নামতে পারছে না জেলেরা। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হয়। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের ঘাট ও জেলে পল্লীগুলোতে সাগরে নামার প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এর মধ্যে দুই মাসেরও বেশি সময় ঘাটে নোঙর করে রাখার ট্রলারগুলোও প্রস্তুত করা হয়। এতদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া ঘাটেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। তবে গত বুধবার থেকে জেলে পল্লী ও ঘাটগুলোর সেই কর্মতৎপরতায় ভাটা পড়ে দেশজুড়ে সহিংসতার কারণে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবদীন বলেন, দেশে সহিংস পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি থাকায় ব্যাংক-বীমা বন্ধ, জেলা শহরের বাইরের জেলেরা আসতে না পারা ও বৈরি আবহাওয়াসহ নানা সংকটে পড়ে অনেক ট্রলার মালিক সাগরে নামার প্রস্তুতি নিতে পারেনি। 

আজ বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের প্রধান পোতাশ্রয় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্ট, মাঝিরঘাট, নাজিরারটেক, খুরুশকুল, শহরতলীর কলাতলী-দরিয়ানগর ঘাটসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক ঘাটে খবর নিয়ে জানা যায়, জেলে ও শ্রমিকেরা ট্রলারে বরফ, জাল ও রসদপাতি তুলতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। 

জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজারে ছোট বড় ৭ হাজার যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো ৮-১০ দিনের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ৭-৮ আঙুলের ফাঁসযুক্ত ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫-৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। তবে কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়া মাছের শতাংশই ইলিশ। নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সকল প্রকার মাছ ধরা নৌকা ঘাটে অবস্থান করছে। এখন সাগরে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রলারগুলো।

এ দিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন ঘাটে বরফকলগুলোও বন্ধ ছিল এবং সে সাথে মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরাও বেকার ছিল বলে জানান কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।

কয়েকজন ট্রলার মালিক জানান, কক্সবাজারের বাইরে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার জেলে কক্সবাজারের ট্রলারে কাজ করে। তারা অধিকাংশই আসতে পারেনি। বুধবার থেকে ব্যাংক বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে পড়েছেন মালিকরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। গত ১ মে মধ্যরাত থেকে সামুদ্রিকমাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় তালিকাভূক্ত ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের কাছে ইতোমধ্যে ৬৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

তবে অনেক জেলে এই সময় খাদ্য সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।